মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বছরখানেকের মাথায় ফের পূর্ব মেদিনীপুর সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩ এপ্রিল থেকে টানা চার দিন জেলায় প্রশাসনিক এবং দলীয় কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। থাকবেন দিঘায়। তবে তাঁর বিগত জেলা সফরে ঘোষিত অনেক প্রকল্পের কাজই এখনও অসম্পূর্ণ। তার অন্যতম হল দিঘার জগন্নাথধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র।
পাঁচ বছর আগে দিঘায় পুরীর আদলে জগন্নাথ মন্দির তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী এবং সাংসদ শিশির অধিকারী তাঁর পাশে ছিলেন। সমুদ্রের ধারে পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের জায়গাতেই নতুন মন্দির গড়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে পরিবেশগত নিষেধাজ্ঞায় সেখানে মন্দির করা যায়নি। পরে দিঘা স্টেশনের পাশে মন্দির তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় হিডকো-কে। এ জন্য ২০ একর জমি দিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। ২০২২ সালের মে মাসে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ব্যয় বরাদ্দ হয় ২০০ কোটি টাকা।
তবে সীমানা প্রাচীর হলেও মন্দিরের কাজ বিশেষ এগোয়নি। জগন্নাথের মাসির বাড়ি কোথায় হবে, তা-ও ঠিক হয়নি। আলাদা কোনও রথ তৈরি হবে কি না, সেই রথ কোন রাস্তা ধরে যাবে, সে-সবও চূড়ান্ত হয়নি। রথ চললে সৈকত শহরের রাস্তাও চওড়া করা প্রয়োজন। উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘পুরোদমে মন্দির নির্মাণ চলছে।’’
২০১৯ সালে দিঘায় এসে স্থানীয় দত্তপুর গ্রামে কিছু দরিদ্র তফসিলি পরিবারকে বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামের ৪০টি পরিবার বাড়ি তৈরির অনুদান এখনও পায়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, জমির নথিপত্র না থাকায় জটিলতা হয়েছে। স্থানীয় পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিলীপ দইলি বলছেন, ‘‘বিষয়টি প্রশাসনের শীর্ষস্তরের নজরে রয়েছে।’’
বস্তুত, জেলা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত একাধিক প্রকল্পের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। জমি আন্দোলনের আঁতুড় নন্দীগ্রামে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের শিলান্যাস ২০১৯ সালে হাওড়া থেকে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৮১১ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়েছিল। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও শুধু পাইপ লাইন বসানোর কাজই চলছে। মহাত্মা গান্ধীর নামাঙ্কিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়তে মহিষাদলের বামুনিয়ায় ২০ একর জমিও দেন হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে ২০২২-এর এপ্রিলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আপাতত মহিষাদল রাজ কলেজের একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে চলছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। তবু মানুষের মন পেতে প্রকল্প ঘোষণা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।’’ জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিকের পাল্টা দাবি, ‘‘জগন্নাথ মন্দির-সহ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সব প্রল্পের কাজই দ্রুত গতিতে চলছে। আসলে বিরোধীরা উন্নয়ন চোখে দেখতে পান না।’’