শনিবার রাতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হতে পারে। —ফাইল চিত্র।
তুমুল সঙ্ঘাতের আবহ। কিন্তু, তার মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাতে রাজভবনে মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসবেন মমতা। শুক্রবার নবান্ন সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। যদিও সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সেখানে স্বাগত জানাবেন মোদীকে। আর রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে বসবেন মোদীর সঙ্গে। জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।
কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন আমন্ত্রণ জানানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। কেন্দ্রীয় জাহাজ ও রসায়ন প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। শনিবার গঙ্গাতীরবর্তী মিলেনিয়াম পার্কে বন্দরের যে অনুষ্ঠান হবে, সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য মমতাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান।
আরও পড়ুন: মোদীকে অভ্যর্থনা জানানোর ভার পড়ল ফিরহাদ হাকিমের উপর
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নবান্ন থেকে ফিরে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হতে পারে। বৈঠক হলে তা রাজভবনে হবে বলেও জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী দু’দিনের সফরে আসছেন বাংলায়। শনিবার বিকেলে বিমানবন্দর থেকে তিনি যাবেন ডালহৌসি এলাকার কারেন্সি বিল্ডিংয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখান থেকে যাবেন মিলেনিয়াম পার্কে। এই দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন। মিলেনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠান সেরে মোদী চলে যাবেন বেলুড় মঠে। রাতে থাকবেন রাজভবনে।
আরও পড়ুন: কাল শহরে মোদী, বিক্ষোভের আশঙ্কায় যাতায়াতের রুট নিয়ে চিন্তায় এসপিজি
সিএএ-এনআরসি নিয়ে মোদী বিরোধিতার সুর এতটাই তুঙ্গে তুলেছেন মমতা যে, তার প্রেক্ষিতে মোদীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনার খবর রাজনৈতিক শিবিরের নজর কাড়তে শুরু করেছে। নতুন আইন সিএএ-র তীব্র বিরোধিতা করছেন মমতা। গোটা দেশে সিএএ-এনআরসি বিরোধী যে আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ এই মুহূর্তে মমতাই। সিএএ-এনআরসি বিরোধিতায় তিনি যে ভাবে একের পর এক মিছিল করছেন, জনসভা করছেন, গোটা বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন, ততটা তীব্র ভাবে কেউ এখনও চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেননি বিজেপি-কে। ফলে সিএএ সংক্রান্ত সঙ্ঘাতে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ অন্য বিরোধী দলগুলিতে যে ভাষায় আক্রমণ করছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ধারালো আক্রমণ শানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আর মমতাও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বার বার বলছেন, বাংলায় কিছুতেই এনপিআর-সিএএ-এনআরসি কার্যকরী হতে দেবেন না। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে যে মোদীর সঙ্গে মমতার একান্ত বৈঠক হতে পারে, রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই তা আশা করেননি।
সিএএ বা এনআরসির যে বিরোধিতা মমতা করছেন, তা লোকদেখানো— এই অভিযোগ কংগ্রেস ও বামেরা বৃহস্পতিবার থেকেই তুলতে শুরু করেছিলেন। সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করানোর দাবি তোলা হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের তরফ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী সে দাবি খারিজ করে দেন। ধর্মঘটের নামে কংগ্রেস এবং বামেরা ‘গুন্ডামি’ করেছে বলে তোপ দেগে মমতা বৃহস্পতিবার এও জানিয়ে দেন যে তিনি, দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যাচ্ছেন না। এর প্রেক্ষিতেই বাম-কংগ্রেস যৌথ ভাবে তোপ দাগা শুরু করেছিল মমতার বিরুদ্ধে। তবে মমতা বৃহস্পতিবারও বলেছিলেন যে, বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি একাই লড়তে পারেন। কিন্তু, মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠকের সম্ভাবনার খবর আসতেই শুক্রবার ফের তোপ দেগেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘যে অজুহাতে বিরোধী দলের ডাকা ১৩ তারিখের সিএএ বিরোধী সভা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বয়কট করলেন, সেটাই প্রকট হল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে। উনি সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে সভায় অনুপস্থিত থেকে এই বার্তাই প্রধানমন্ত্রীকে দেবেন যে, আমি বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরালাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেটিংটা ভিতরে ভিতরে ছিলই। এখন সেটা বাইরে এসে গেল। তৃণমূল এবং বিজেপির নিষ্ঠাবান কর্মীদের জন্য দুঃখ হচ্ছে। বাংলায় যারা ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াই লড়ছেন তাঁদের সঙ্গে তঞ্চকতা করছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।’’