ফাইল চিত্র।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আচরণ নিয়ে দলের নেতাদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সোমবার আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্ত্রীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, এ বার থেকে প্রত্যেকের উপরে ‘নজর’ থাকবে তাঁর। সময়ের দিক থেকে এই বার্তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার মূল আলোচনা শেষে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, দল বা সরকারের অসম্মান হয়, এমন কোনও কাজ করা যাবে না। এরই সঙ্গে জানান, প্রত্যেকের উপরে ‘নজর’ও রাখবেন তিনি।
পার্থ-কাণ্ডের পরে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ‘ক্যাবিনেট-অ্যাজেন্ডা’র বাইরে কোনও কথা বলেননি বলেই খবর। কিন্তু চার দিনের ব্যবধানে এ দিনের বৈঠকে মমতার বার্তাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার রদবদলের সুস্পষ্ট বার্তাও এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক জনকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন কয়েক জনকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করারও কথা জানিয়েছেন মমতা। ফলে, উভয় পক্ষের কাছেই মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘নজর’ রাখার বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে ভিন্ন চোখেই দেখছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, অতীতে মন্ত্রিসভার বেশ কয়েক জন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের আচরণ নিয়ে তেমন জলঘোলা হয়নি। অথচ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর শুধু যে পাহাড়প্রমাণ টাকার হদিস মিলেছে তা-ই নয়, তার ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। এক দিকে চাকরি-প্রার্থীদের আন্দোলন, অন্য দিকে সেই সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে শাসক দল এবং সরকার যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। পার্থের ব্যক্তিগত আচরণের অনেক তথ্য প্রকাশ্যে আসাতেও অস্বস্তি বেড়েছে যথেষ্ট। সেই প্রেক্ষিতেই যথাযথ আচরণের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে নজরদারির বার্তা মন্ত্রিসভার নতুন এবং পুরনো সদস্যদের দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। উনি যা বলছেন, তা আগে ঘরের লোকেদের বলা উচিত ছিল! আর যাঁদের বলছেন, তাঁরা কেউ সে কথা কানে তুলবে না। চোরে না শোনে ধর্মের কথা!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের বলেছেন ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার মতো কাজ করা যাবে না। মন্ত্রীদের ঘাড়ে মাথা নেই, না হলে তাঁরা বলতে পারতেন, ভাবমূর্তি তৈরির আসল দায়িত্ব তো ২৯৪ আসনে যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রীর! ভাবমূর্তির ভাল, মন্দ বা মাঝামাঝি বা পচে যাওয়া, সব কিছুরই দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারের মতে, ‘‘এই কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন, অসম্মান হওয়া বা ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ার মতো কাজ মন্ত্রীরা এর আগে করেছেন! দল না হয় পরে হলেও পার্থবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কথা বিশ্বাসযোগ্য করাতে হলে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে দেখাতে পারতেন।’’