আগামী এপ্রিলে শিল্প সম্মেলনকে তুলে ধরতে চাইছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা এ বার দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেব। বড়, মাঝারি, ছোট ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হবে। বিদেশী যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও স্বাগত। ফলে সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক কাজ হবে।”
ফাইল চিত্র।
বর্তমান সরকারের কাছে রাজ্যের শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই যে পাখির চোখ, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শিল্পমহলের সঙ্গে রাজ্যের শিল্প পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, এ বার যেমন বড় শিল্পের দিকে রাজ্য নজর দেবে, তেমনই আগামী শিল্প সম্মেলনে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেবে সরকার। গোটা দেশের সামনে রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তির প্রচারেও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে এ দিন। গোটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা স্বীকার করে অফিসারমহলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, প্রত্যেককে নির্দিষ্ট কাজ করতে হবে নিখুঁত ভাবে। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করবে না সরকার। তা নিশ্চিত করতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকেও পৃথক দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী শিল্পমহলের উদ্দেশে এ দিন বলেন, “বাংলা আগামী দিনে বিনিয়োগের গন্তব্য। সামাজিক সব কাজ আমরা করেছি। এ বার শিল্প, কর্মসংস্থান, পরিকাঠামোই সরকারের লক্ষ্য। আর্থিক পরিস্থিতিও উন্নতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পরিকাঠামোতে অনেক কাজ হয়েছে। দেখতে চাই, এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হবে।” রাজ্যের দাবি, গত ১০ বছরে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে শিল্পক্ষেত্রে। তার মধ্যে ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা মাঝারি এবং ক্ষুদ্রশিল্পে ব্যাঙ্কঋণ হয়েছে। তাই এখন বড় প্রকল্পকে সামনে রাখা হয়েছে। তাজপুরের বন্দর নিয়ে দরপত্র ডাকা হয়েছে, বিনিয়োগ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ডেউচা-পাঁচামিতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে জঙ্গলমহলেও। উৎপাদন, ইস্পাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেরও সেই প্রস্তাব আসছে। এটি ডানকুনি-অমৃৎসর ফ্রেট করিডরের আওতায় আসবে। সরকারের পরিকল্পনা, ডানকুনি-রঘুনাথপুর, ডানকুনি-কল্যানী এবং ডানকুনি-হলদিয়া শিল্প করিডর তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে অশোকনগরে তেল, গ্যাস পাইপলাইন, দিঘায় কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, এমএসএমই, চর্মশিল্প, ফুটপার্ক, সাইকেল তৈরির কারখানা, স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য বিদ্যুৎচালিত তাঁত প্রকল্প এবং ইথানল, ডেটা সেন্টার নীতি তৈরি হয়েছে। কৃষিজাত পণ্য, উদ্যানপালন, মৎস, পর্যটনের বিপুল বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে। শ্লোভানিয়ার একটি বড় সংস্থাও রাজ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী এপ্রিলে শিল্প সম্মেলনকে তুলে ধরতে চাইছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা এ বার দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেব। বড়, মাঝারি, ছোট ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হবে। বিদেশী যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও স্বাগত। ফলে সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক কাজ হবে।”
শিল্পায়নের এই সলতে পাকানোর কাজে রাজ্য প্রশাসন এবং অফিসারদের ভূমিকার কথাও এ দিন স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। তাঁর পরামর্শ, শিল্পস্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনগুলির সর্বত্র একই ধরনের করব্যবস্থা চালু করা হোক। বিল্ডিং প্ল্যান, জমি-ট্রেড লাইসেন্স, দমকল, পরিবেশ-সহ সব ছাড়পত্র সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজে অফিসারদেরও সরাসরি দায়বদ্ধ করেছেন মমতা। বিভিন্ন দফতর-কর্তাদের সঙ্গে মুখ্যসচিবের সাপ্তাহিক সমন্বয় বৈঠক নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “প্রধান সচিবদের আরও সক্রিয় হতে হবে। সাত—আটজন কাজ করবে, আর বাকিরা ঘুরে বেড়াবে, তা হবে না। যে প্রধান সচিব কাজ করবেন না, তাঁদের সেই দফতরে রেখে লাভ কী?”
বৈঠকে উপস্থিত শিল্পপতিরাও রাজ্যের শিল্পবান্ধব পদক্ষেপগুলিকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় স্তরে তা প্রচারের পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকে শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েনকা বলেন, “বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দ্রুত কাজ এবং বিনিয়োগের সুরক্ষা দরকার হয়। সবই আছে। এর যথাযথ প্রচার দরকার।” হর্ষ নেওটিয়ার কথায়, “অভিন্ন ব্র্যান্ড তৈরি করে রাজ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা প্রয়োজন।” আদানি-পোর্টের সিইও করণ আদানি বলেন, “লজিস্টিক্স, শিল্প, সমুদ্রবন্দরে এ রাজ্যের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।” দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বই-সহ বড় শহরগুলিতে এ রাজ্যের শিল্প-পদক্ষেপগুলি তুলে ধরতে সুসংহত পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মমতাও। এ কাজে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শিল্পপতিদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। দরকারে প্রচারের জন্য পৃথক চ্যানেলের তৈরির বিষয়টিও খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন মমতা।