হাওড়া শহরের রাস্তায় উপচে পড়েছে ভ্যাটের জঞ্জাল। —নিজস্ব চিত্র।
জলসঙ্কট মিটলেও নয়া সমস্যায় হাওড়া শহরের বাসিন্দারা। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে জঞ্জাল। উপচে পড়েছে শহরের বিভিন্ন ভ্যাট। রাস্তা দিয়ে চলার উপায় নেই। সেই জঞ্জাল মাড়িয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল ভ্যাট থেকে জঞ্জাল সরানো হয়নি। চ্যাটার্জিহাট, রামরাজাতলা, জগাছা, কালীবাবুর বাজার— সর্বত্র প্রায় একই ছবি।
হাওড়ার পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে আপাতত আবর্জনা ফেলা যাবে না। এই সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা। কোথায় আর্বজনা ফেলা হবে, সেই নিয়েই এখন প্রশ্ন। ওই ভাগাড়ের বদলে আর্বজনা ফেলার নতুন জায়গা এখনও ঠিক হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার হাওড়ার পুর আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকে জঞ্জাল সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী শহরবাসী।
হাওড়া শহরের এখন অন্যতম বড় সমস্যা আবর্জনা। ভাগাড়ে নতুন করে আর আবর্জনা ফেলা যাবে না, পুরসভার সেই সিদ্ধান্তের পরই সমস্যা বেড়েছে। হাওড়া শহরের বিভিন্ন ভ্যাটে বাড়ছে আবর্জনার স্তূপ। রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ছে সেই ময়লা। দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় স্থানীয়দের। শুধু বড় রাস্তা নয়, অলিগলিতেও ছড়িয়ে সেই দুর্গন্ধ। বিভিন্ন ভ্যাটে জমা আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে, তার উত্তর এখনও মেলেনি পুরসভার তরফে। শহরের জঞ্জাল সাফাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের বাসিন্দা কিশলয় ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ভ্যাটের ময়লা রাস্তায় চলে এসেছে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেল প্রায় একই অবস্থা।’’
মঙ্গলবার ফিরহাদের সঙ্গে বৈঠকেই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা শহরের বিভিন্ন ভ্যাট থেকে জঞ্জাল তোলা হয়নি তা স্বীকার করেছেন পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, বিকল্প জায়গার খোঁজ চলছে। যত ক্ষণ পর্যন্ত না বিকল্প জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন সমস্যা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই সমাধানসূত্র মিলবে বলে আশাবাদী তিনি।
বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধসই এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। অনেকের মাথার উপরই এখন ছাদ নেই। দিন-রাত কাটছে খোলা আকাশের নীচে। এমন অনেক পরিবারের এখন একটাই প্রশ্ন, কোথায় যাব? তাদের দাবি, প্রশাসন থেকে স্থানীয় নেতা-মন্ত্রী সকলেই আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। কোথায় ঘর বাঁধবেন, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। কিন্তু সদুত্তর মিলছে না।
পাশাপাশি, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় এক ক্লাবে বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই ভাগাড় এলাকার বাসিন্দারা। বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কোথায় যাবেন, তা ঠিক করে দেবে সরকারই।
উল্লেখ্য, বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে বার বার ধসের জেরে বহু বাড়িতে ফাটল ধরেছে। রবিবারই সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের চোখের সামনে একটি বাড়ি আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার থেকেই এলাকায় মাইকিং শুরু করেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। বাসিন্দাদের বিপজ্জনক এলাকা থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য আবেদন করেন তাঁরা। মঙ্গলবার পুলিশ-প্রশাসনও বৈঠক করে একই কথা বলে। তবে এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। সোমবার ভাগাড় এলাকায় গিয়েছিলেন ফিরহাদ। পরে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। মঙ্গলবার কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল ওই এলাকা পরিদর্শনে যায়। কথা বলে স্থানীয়দের সঙ্গে। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও।