২১ জুলাই তৃণমূলের বাৎসরিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। ছবি: পিটিআই।
২১ জুলাই তৃণমূলের বাৎসরিক সভায় এ বার হাজির ছিলেন সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রধান অখিলেশ যাদব। যা জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিরোধী পরিসরে মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। অখিলেশের উপস্থিতিতে রবিবারের সভায় জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, তা ‘উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, মমতা আসলে তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্যতম শরিক নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর উদ্দেশে মন্তব্য করেছেন এবং তাঁর নিশানায় ছিলেন মোদী, বিজেপি।
রবিবারের সভায় মমতা বলেন, “এই যে বিজেপি, এ বারে তো মেজরিটি পায়নি। কাউকে কিনে নিয়ে, কোথাও কেলেঙ্কারি করে... কখনও শুনেছেন, টাকা দিয়ে মন্ত্রক দেয়নি? জীবনে কখনও শুনিনি, টাকা দিয়ে দল কিনে নেওয়া যায়, মন্ত্রিত্ব না দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়। আর এই সব লোকেরাও তেমন! আরে এত ভিতু! এতই নোংরা, এতই লোভী যে, টাকার কাছে সম্মান বিকিয়ে দিল!”
উল্লেখ্য, মমতা কারও নাম করেননি। তবে পরিপার্শ্ব বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, তৃণমূলনেত্রী আসলে নিশানা করতে চেয়েছেন বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে।
গত সপ্তাহে মুম্বই সফরে গিয়েছিলেন মমতা। বাণিজ্যনগরীতে তাঁর যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানীর বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া। ঘটনাচক্রে, মুম্বই গিয়েও বিজেপি-বিরোধী পরিসরে সমন্বয় রাখতে চেয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। দেখা করেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে। উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করার পর মমতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার বেশি দিন থাকবে না। তা শীঘ্রই পড়ে যাবে। মহারাষ্ট্রের সাংবাদিকেরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কি নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডুদের ভাঙিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছেন? জবাবে মমতা বলেছিলেন, “আমি কারও পক্ষে নই, আমি কারও বিরুদ্ধেও নই, আমি কারও সম্পর্কে কিছু বলব না।”
রবিবারের ধর্মতলার সভায় মমতার মঞ্চে হাজির হয়ে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, “কেন্দ্রের সরকার বেশি দিন চলবে না। ওরা বেশি দিন চালাতে পারবে না।” অখিলেশের পরেই বক্তৃতা করতে উঠে সমাজবাদী পার্টি নেতার ওই কথাকে উদ্ধৃত করে মমতা বলেন, “অখিলেশ ঠিক বলেছে। কেন্দ্রের সরকার বেশি দিন চলবে না।” এই প্রসঙ্গেই ভোট শতাংশের পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা বোঝাতে চান, নরেন্দ্র মোদীর থেকেও বেশি সমর্থন রয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র। তবে, অর্থের বিনিময়ে মন্ত্রিত্ব ‘হারানো’র প্রশ্ন তুলেই মমতা তীব্র সমালোচনা করেছেন। ফলে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, মমতা কোনও দল বা নেতার নাম না করলেও তাঁর নিশানা স্পষ্ট।