ছবি: পিটিআই।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাণ্ডারী এবং এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনে স্মরণ করতে গিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে পরোক্ষে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ও লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানানোর অবসরে শুক্রবার মমতা তুলে আনলেন অহিংসা ও গণতন্ত্র এবং কৃষকদের রক্ষা করার সংগ্রামের অঙ্গীকার। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় এই সব কিছুই বিপন্ন বলে অভিযোগে সরব বিরোধীরা এবং তার পাশাপাশি নানা বিদ্বজ্জন ও নাগরিক সংগঠন।
‘জাতির জনকে’র ১৫১তম জন্মদিনে টুইট করে মমতা বলেছেন, ‘‘গাঁধীজি, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, মৌলানা আজাদ, অম্বেডকর এবং আরও অনেকে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য নিরলস সংগ্রাম করেছেন। আমরা কি সেই অর্জিত অধিকার সহজে ছেড়ে দেব? বাপুর দর্শন অতীতের চেয়ে এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।’’ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গাঁধীর অহিংসার বার্তা আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, পূর্ব মেদিনীপুরে বাপুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে রাজ্য সরকার।
একই ভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুরের জন্মদিন উপলক্ষে মমতা টুইট-বার্তায় বলেছেন, ‘‘৫৫ বছর আগে তিনি ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’ বলে সেই অনুপ্রেরণাদায়ক স্লোগান দিয়েছিলেন। যা-ই ঘটুক, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কৃষক ভাই-বোনেদের পাশে আমরা থাকব। কৃষকেরাই আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড।’’ বাংলায় ২০১১ সালে কৃষকের যে আয় ৯১ হাজার টাকা ছিল, ২০১৮ সালে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যখন কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সে সময়ে মমতার এই বার্তার রাজনৈতিক অভিমুখ স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: ছ’মাস বকেয়া দেয়নি সরকার, ক্ষুব্ধ ওষুধ সরবরাহকারীরা
আরও পড়ুন: অনলাইনে পৌরহিত্যের পাঠ দিচ্ছেন সোমনাথ
মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা আবার মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। নতুন কৃষি আইনের সমর্থনে বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে শিয়ালদহ হয়ে সিঁথির মোড় পর্যন্ত এ দিন দিলীপবাবুর নেতৃত্বে বাইক মিছিল করে বিজেপি। ওই কর্মসূচির ফাঁকেই দিলীপবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যের কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করেছেন। আবার এখন ফড়ে রাজের অবসান ঘটানোর কৃষি আইনের বিরোধিতা করছেন!’’
কিসান সম্মান ও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প এবং গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারের ফের সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাটে গাঁধী জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপাল ফের অভিযোগ করেছেন, গাঁধীজি অহিংসার কথা বলতেন কিন্তু বাংলা বেআইনি বোমা-শিল্পের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে, আমলা ও পুলিশ-প্রশাসনকে শাসকের কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এমন সব মন্তব্য করে রাজ্যপাল নিজের পদের নামের আগে ‘নৈ’ জুড়ে ‘নৈরাজ্যপাল’ হয়ে উঠছেন কেন? উত্তরপ্রদেশের হাথরসের জেলাশাসকের ফরমানের বিষয়ে ওঁর অভিমত কী? সেখানে যা হচ্ছে, তা নিয়ে কী বলবেন?’’ ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও।