মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে চলেছে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ। আলিপুরের সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় বসুর বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অভিযান নিয়ে এ বার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সঞ্জয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সঞ্জয়কে নিজের আইনজীবী হিসাবেও পরিচয় দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দাবি করেন, ওই আইনজীবীই তাঁকে জানিয়েছেন যে, তাঁর বাড়ি থেকে কিছুই খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা। মমতার কথায়, ‘‘সঞ্জয় জানিয়েছেন, ‘শুধু আপনাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করছিলেন ওঁরা’ (তদন্তকারীরা)।’’
মঙ্গলের পর বুধবারও শহরের একাধিক জাগয়ায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি। সেই তালিকায় আলিপুরের বর্ধমান রোডের আবাসনে সঞ্জয়ের ফ্ল্যাটও ছিল। সকাল থেকেই ওই আইনজীবীর বাড়িতে ইডি আধিকারিকদের তৎপরতা দেখা গিয়েছে। দফায় দফায় এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা পুলিশের একটি বড় দলও মোতায়েন করা হয় সেখানে। ইডি আধিকারিকদেরও যাতায়াত লেগেই ছিল সঞ্জয়ের আবাসনে। সেই অভিযান গড়িয়েছে বৃহস্পতিবারেও। কেন্দ্রীয় সংস্থার এই অভিযান নিয়ে মমতা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সঞ্জয় সরকারি আইনজীবী। আমারও আইনজীবী। ওঁর বাড়িতে অনেক সরকারি কাগজপত্র রয়েছে। যেগুলো ওঁর কাজে লাগে। গতকাল সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে ওঁর বাড়িতে। মেঘালয়ের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা পর্যন্ত সেই অভিযান চলবে! এটা কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়?’’
সঞ্জয়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান নিয়ে ইডির পক্ষে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, পুরনো এক চিটফান্ড মামলায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগের ভিত্তিতে সঞ্জয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ইডির ওই সূত্রই জানিয়েছে, সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। খতিয়ে দেখা হয় তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়, বৃহস্পতিবার সকালে সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা।
মমতা যদিও অভিযোগ করেন, হেনস্থা করার উদ্দেশ্যেই সঞ্জয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করেছি, ওরা (ইডি) কিছু পেয়েছে কি না। উনি জানিয়েছেন, কিছু পায়নি। কিছুই নিয়ে যায়নি ওরা। শুধু আপনাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করছিল। আর আমার ঘর তছনছ করে গিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক জন আইনজীবী তাঁর মক্কেলের থেকে টাকা নেবেন, এটা তো তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। একটা কেসে তো উনি টাকা ফেরতও দিয়েছেন। এটা মানুষকে হেনস্থা করা ছাড়া আর কিছু নয়।’’
ইডি সূত্রে দাবি, বুধবার যে সব জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে, তা কোনও একটি নির্দিষ্ট মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সারদা-সহ একাধিক মামলায় সেই অভিযান চলেছে।
সঞ্জয়ের বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান নিয়ে বুধবারই শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দাবি করেছেন, ‘‘গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরায় টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছেন সঞ্জয় বসু। উত্তরবঙ্গ থেকে আসানসোল, পুলিশকে সংগঠিত করে টাকা তোলা হয়েছে।’’ তার পরেই বিষয়টি নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রীও।