পাহাড়ে বন্ধ নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে বন্ধকে সমর্থন করে না রাজ্য সরকার। তরাই-ডুয়ার্সে চা শ্রমিকদের সমস্যা মিটলেও পাহাড়ে সমস্যার নেপথ্যে একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফর সেরে সোমবার কলকাতা ফেরার আগে মমতা বলেন, ‘‘তরাই-ডুয়ার্সে বোনাস হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র পাহাড়ের ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করছে একটি রাজনৈতিক দল।’’
২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে চা শ্রমিকদের আটটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। যদিও সোমবার দুপুর পর্যন্ত দার্জিলিং শহরে বন্ধের কোনও প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। দোকানপাট খোলাই রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ধ সমর্থনকারীরা জোর করে দোকান বন্ধ করানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। কার্শিয়াং শহরেও পর্যটকদের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। পুলিশ গিয়ে তাঁদেরও রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। কালিম্পঙ জেলাতেও বন্ধের দৃশ্যত কোনও প্রভাব পড়েনি।
চা শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, রবিবার তাঁরা চা বাগানের মালিকপক্ষগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে সদর্থক কিছুই মেলেনি। তাঁরা মালিকপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, শ্রমিকদের যাতে অন্তত ২০ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেই দাবিতে মালিকপক্ষ মান্যতা দেয়নি বলেই অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনগুলির। পরে অবশ্য তাঁদের জানানো হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকেরা। এই অবস্থায় রবিবারই চা শ্রমিকদের আটটি সংগঠন মিলিত ভাবে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
এর প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা কোনও বন্ধ সমর্থন করি না। বাংলায় কোনও বন্ধ হয় না। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চলছে। সেখানে সমাধান বেরিয়ে আসবে।’’ জট কাটাতে কি রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করবে? এই প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকার কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
জিটিএ-র ক্ষমতাসীন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)-ও চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্ধের বিষয়ে দলগত অবস্থান স্পষ্ট না করলেও বিজিপিএম নেতা শক্তিপ্রসাদ শর্মা জানিয়েছেন, তাঁরা শ্রমিকদের সঙ্গেই রয়েছেন। যদিও সোমবার সকাল থেকে চা শ্রমিকদের ডাকা বন্ধে দৃশ্যত তেমন প্রভাব পড়েনি কালিম্পং জেলায়। বস্তুত, কালিম্পং জেলায় চা বাগানের সংখ্যা খুব বেশি নেই। পাহাড়ে চা বাগানের সিংহভাগই দার্জিলিং জেলায়। কালিম্পঙে বন্ধের বিশেষ প্রভাব না পড়ার নেপথ্যে এটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন একাংশ। তবে দার্জিলিং জেলার পাহাড়ি এলাকায় এই বন্ধ শেষ পর্যন্ত কতটা প্রভাব ফেলবে, সে দিকে নজর থাকছে শ্রমিক সংগঠনগুলির। যদিও শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা চালকদের অনুরোধ করবেন গাড়ি না চালানোর জন্য।