বৃহস্পতিবার বার বাগটুই গ্রামে মমতা। পিটিআই
মুদিখানা দোকানটা খুলেছে বৃহস্পতিবার। কিছু সব্জিও রয়েছে। সামনে কয়েকজন লোক। বাকি বগটুই গ্রাম রাতারাতি যেন জনমানবশূন্য হয়ে গিয়েছে। মানুষ মানেই উর্দিধারী পুলিশ কিংবা সাংবাদিক। প্রথমে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের মৃত্যু অনেকটা থমথমে করে দিয়েছিল গ্রামটাকে। আর তার পরে একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মৃত্যু, আতঙ্ক তৈরি করে দেয়। গ্রামের মানুষ যে যার মতো অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে ফিরছেন অনেকে। গ্রামের বড় মুদিখানা দোকানটাও খুলেছে। সেখানেই বাসি সব্জির পসরা। কিন্তু ক্রেতা নেই। আসলে বগটুই ছন্দে ফিরতে পারেনি। গ্রামের মানুষের সেই সব হারানো কষ্টকেই যেন ছুঁতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামবাসীদের কথাও শুনলেন। আর তার পরে বললেন, ‘‘আপনাদের ঘরের লোক মারা গিয়েছে, আর আমার হৃদয় মারা গিয়েছে।’’ একই সঙ্গে সায় দিলেন গোটা ঘটনার পর থেকেই গ্রামবাসীদের পক্ষে তোলা পুলিশের একাংশের গাফিলতির অভিযোগে।
বুধবার গ্রামে এসেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এসেছিল শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়ক দল। তখনও গ্রাম প্রায় শূন্য ছিল। তবে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে পৌঁছনোর আগে থাকতেই ঘর হারানো, ঘরের মানুষ হারানো মহিলা, পুরুষদের অনেকে বগটুই ফেরেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর চোখে ছিল জল। সঙ্গে ভয়ও। কেউ কেউ টানা কেঁদেই চলছিলেন টানা। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে সেই চোখের জল পুরোপুরি মুছে যাবে কি? এমন প্রশ্নের মধ্যেও এটা ঠিক যে, সব হারিয়েও নিজের গ্রামে থাকার ভরসা জুগিয়ে গেলেন মমতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বগটুইয়ে দাঁড়িয়েই মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, গ্রামে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। পাড়ার লোকেরা পাড়াতেই থাকবেন। প্রথম থেকেই আক্রান্তদের অভিযোগ ছিল তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের দিকে। দ্রুত তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন মমতা। সেই সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দেন, ‘‘আত্মসমর্পণ না করলে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। যেখান থেকেই হোক। এমন করে মামলা তৈরি করতে হবে যাতে দোষীরা ছাড় না পায়।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘এমন সাজা হোক যাতে অন্য কোথাও কেউ এই ধরনের অপরাধ না করে।’’ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করেন তিনি।
আনারুলকে গ্রেফতার করতে হবে এমন দাবি উঠলেও বগটুইয়ের বড় চাওয়া ছিল নিরাপত্তা। সঙ্গে ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ। মমতাও জানান, গোয়েন্দা শাখা এবং আইসি দায়িত্ব পালন করেননি। ভাদু শেখের খুন এবং পরে অগ্নসংযোগ দু’টি ঘটনাই খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে এমনটা হত না দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা জেনেও পুলিশকে ঠিক মতো কাজে লাগায়নি তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ গ্রামবাসীদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি এ দিন যেন সব চাওয়াও যতটা সম্ভব মেটাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া বাড়ি তৈরি করতে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। সেই সময়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামের এক মহিলা প্রশ্ন করেন, এক লাখ টাকায় কী হবে? এর পরেই জেলাশাসককে কার্পণ্য না করে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে নির্দেশ দেন মমতা।