‘সংযোগ যাত্রা’য় রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন তিনি করেছিলেন ‘জনসংযোগ যাত্রা’। এখন যখন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের সর্বময় নেত্রী, তখন তৃণমূলের পরবর্তী প্রজন্ম সেই পুরনো ধাঁচেই কর্মসূচি নিল। যা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, সারা বাংলা ঘুরে ‘সংযোগ যাত্রা’ করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’মাস ধরে চলবে এই কর্মসূচি। মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনবেন তিনি।
বুধবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই তিনি জানান, দলের কর্মীদের নিয়ে আগামী দু’মাস অভিষেক সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে জনসংযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে সেই কর্মসূচি শুরু হবে। মানুষের কাছে পৌঁছবেন অভিষেক স্বয়ং। তাঁদের কোনও সমস্যা আছে কি না, সব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন কি না, কোথাও কোনও কাজ আটকে আছে কি না, তা শুনবেন অভিষেক। সেই অনুযায়ী সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেবেন।
তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলছেন, এই ‘সংযোগ যাত্রা’ আদতে ‘জনসংযোগ যাত্রা’। এখনও সরকারের বিভিন্ন বিষয় অভিষেক পরিচালনা করেন। বিভিন্ন মন্ত্রীকে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। কিন্তু সরাসরি মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে যে জনসংযোগ, তা সে ভাবে এখনও অভিষেক করেননি। যা করেছিলেন মমতা নিজে। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গোটা বাংলা সড়কপথে ঘুরেছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই রাজ্যের রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন এলাকা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল তিনি। যে অভিজ্ঞতা পরবর্তী কালে তাঁর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাজে লেগেছে। তৃণমূলের একটি অংশের মতে, অভিষেকও সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাইছেন। যাতে পরবর্তী কালে তাঁর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।
বুধবার অভিষেকের ওই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করতে গিয়ে মমতা জানান, ‘দুয়ারে সরকার’ বা ‘দিদির দূত’-এর মতো সরকারি প্রকল্প রাজ্যে চালু আছে। তার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরকারি সাহায্য পেতে পারেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতে একই রকম উদ্যোগ এ বার নেওয়া হচ্ছে দলের তরফেও। যার কাণ্ডারি হবেন অভিষেক। তিনি এবং দলের বাকি কর্মীরা মানুষের কাছে পৌঁছে যাবেন তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে।
গত কয়েক দিন ধরে তাপপ্রবাহের দাপটে নাজেহাল বাংলা। এই গরমে অভিষেকের এমন উদ্যোগে প্রথমে নিষেধই করেছিলেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেককে গরমে এ সব করতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, এত কষ্ট করবি কী ভাবে? সাধারণ মানুষেরও তো কষ্ট হবে। কর্মীরাও গরমে কষ্ট পাবে। কিন্তু ও এই সময়েই এই কর্মসূচি করতে চেয়েছে।’’
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। অনেকে মনে করছেন, সেই কারণেও অভিষেকের এই ‘সংযোগ যাত্রা’র উদ্যোগ। এই কর্মসূচি জেলায় জেলায় তৃণমূলকে মানুষের কাছে নতুন করে পৌঁছে দেওয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। অনেকে এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই দলের তরফে নতুন এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। যেখানে মমতা থাকবেন না। কর্মসূচি পরিচালনা করবেন অভিষেক। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকার বা শাসকদলের তরফে এই জল্পনার সত্যতা স্বীকার করা হয়নি।
সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি প্রসঙ্গে অভিষেককে তলব করে চিঠি দিয়েছিল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সেই তলবের সিদ্ধান্ত মুলতুবিও রেখেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। রাজ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়েও সরব হয়েছেন মমতা। দলের চার জন বিধায়কের গ্রেফতারি প্রসঙ্গেও গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।