মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিনীত গোয়েল। —ফাইল ছবি।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাই কোর্ট, এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ। সেই আবহেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি তোলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই দাবিতে লালবাজার অভিযানও করেছেন তাঁরা। এ বার সেই দাবি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, সিপি অনেক বার এসেছিলেন পদত্যাগ করার জন্য। কিন্তু কেন তাঁর পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি, তা-ও স্পষ্ট করে দেন মমতা।
সোমবার নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলকাতার পুলিশ কমিশনার নিজে অনেক বার আমার কাছে এসেছেন পদত্যাগ করার জন্য। সাত দিন আগেও।’’ কেন তাঁর পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সামনে পুজো রয়েছে। আপনারাই বলুন, যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তাঁকে তো আইনশৃঙ্খলা জানতে হবে। কিছু দিন ধৈর্য ধরলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়!’’ তার পরই জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি নিয়ে মমতা কড়া স্বরে বলেন, ‘‘আপনারা বলছেন সবাইকে বদলাতে হবে। আপনারা ১০টা দাবি রাখতেই পারেন, কিন্তু আমি পাঁচটা দাবি পূরণ করতে পারি, পাঁচটা না-ও করতে পারি।”
আরজি কর-কাণ্ডের পরই বেশ কয়েকটি দাবি সামনে রেখে আন্দোলনের সুর চড়াচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আরজি করের একাধিক প্রশাসনিক কর্তা বদলের দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আরজি কর-কাণ্ডের দায় নিয়ে সিপির পদত্যাগের দাবিও জানান আন্দোলনকারীরা। সেই দাবিকে সামনে রেখে গত ২ সেপ্টেম্বর লালবাজার অভিযান করেছিলেন তাঁরা। বিনীতের পদত্যাগের কথা জানিয়ে তাঁর কাছেই স্মারকলিপি জমা দেওয়ার দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে তাঁদের মিছিল আটকে দেওয়া হয় লালবাজার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার আগে। সেখানেই ২২ ঘণ্টা অবস্থান করেন তাঁরা। তার পর লালবাজারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
বিনীতের সঙ্গে দেখা করার পরেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের প্রতিনিধি দলের বক্তব্য ছিল, “পুলিশ কমিশনারকে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি এই ঘটনায় নৈতিক দায়ভার নিচ্ছেন কি না। জবাবে সিপি জানিয়েছেন, তিনি নিজের কাজে সন্তুষ্ট। তবে যদি তাঁর কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনে করেন, তিনি নিজের কাজে ব্যর্থ এবং তাঁকে যদি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়— সেটিও তিনি হাসিমুখে মেনে নেবেন।” তবে তার পরেও পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সোমবার সেই প্রসঙ্গেই মতামত জানালেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী।
তবে মমতার ব্যাখ্যায় খুশি নন আন্দলনকারীরা। তাঁদের প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘একটা মানুষ জানেন তিনি ব্যর্থ। সাধারণ মানুষও জানেন তিনি প্রত্যেকটা কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পরেও তাঁকে পদত্যাগ না করিয়ে ওই পদে রেখে দেওয়া, সেই সিদ্ধান্তটা আমার মনে হয় সাধারণ মানুষকে অপমান করা।’’ আন্দোলনকারীদের কথায়, ‘‘আন্দোলনের যে সুর উঠে এসেছে, সেটাকে মান্যতা না দিয়ে শুধু পুজোর ছুতো দিয়ে রেখে দেওয়ার কী মানে? আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী নন।’’