মেয়েদের দিনে ‘সাধারণ মেয়ে’ থেকে মুখ্যমন্ত্রী, সকলেই পথে।শুক্রবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস চলছে বলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির রাজ্য নেতারা বারবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলছেন। এ বার তৃণমূল নেত্রী মমতা পাল্টা দাবি করলেন, ‘মোদীর আমলে দেশে ২৬০% সন্ত্রাস বেড়েছে।’’
লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি-বিরোধী আক্রমণে ততই সুর চড়াচ্ছেন মমতা। উরি, পুলওয়ামা, পাঠানকোটের মতো একের পর এক ঘটনা কেন ঘটেছে, সে প্রশ্ন তুলে মমতা ফের বিঁধলেন মোদী সরকারকে। শুক্রবার, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্ক থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত তৃণমূল মহিলা সংগঠনের মিছিল শেষে মমতা স্পষ্টতই ভোটের প্রচার শুরু করে বললেন, ‘‘আগামী দিনে নতুন সরকার উগ্রপন্থার মোকাবিলা করবে। কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।’’
শুধু তাই নয়, এদিন দিল্লিতে প্রকাশিত মমতার লেখা ‘ইন্ডিয়া ইন ডিস্ট্রেস’ বইয়েও রয়েছে পুলওয়ামা নিয়ে আলাদা অধ্যায়। যা পরিশিষ্টে যোগ করা হয়েছে। সেখানে মমতার প্রথম প্রশ্ন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে কনভয়ে জঙ্গি আক্রমণ সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য ভারত সরকারের কাছে ছিল। ঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সেই তথ্য দেওয়া হয়নি কেন?’’ দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘‘ওই অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা দিয়ে একসঙ্গে ৭৮টি গাড়ির কনভয় কেন চালানো হল? এই সমন্বয়ের অভাব ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গাফিলতির দায়িত্ব কে নেবে?’’ এ-ও লিখেছেন, ‘‘কেন সরকারের ৩ ঘণ্টা লেগে গেল প্রতিক্রিয়া জানাতে?’’
‘বিপন্ন ভারত’ নামে বাংলায় মমতার একটি বই আগে থেকেই রয়েছে। এ বার ইংরেজিতে বইটি প্রকাশ করা হল। রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে রাজধানীতে এই বই প্রকাশ করে জাতীয় রাজনীতিতে বার্তা দিতে চাইলেন মমতা।
আরও পড়ুন: কংগ্রেসকে চাপে রেখে দুই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা বামেদের
তৃণমূল নেত্রী এদিন কলকাতার মিছিলে এ প্রশ্নও তুলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার নথিপত্রও মোদী সরকার ‘হারিয়ে ফেলেছে’ কি না। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাফালের নথিপত্রের মতোই দেশের অভ্যন্তরীণ নথিপত্রও চুরি করেননি তো? রাফাল-নথিই যাঁরা সুরক্ষিত রাখতে পারেন না, দেশকে সুরক্ষিত রাখবেন কী ভাবে?’’ ভোটপ্রচারে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গের পাশাপাশি কেন্দ্র-রাজ্যের প্রকল্পগত ফারাককেও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ৩৫%-এর বেশি মহিলা থাকবেন বলে এ দিনই ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা।
রাজ্যের ক্রমবর্ধমান নারী-নিগ্রহের প্রতিবাদে বিজেপি এবং সিপিএমও পথে নেমেছিল। সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এ দিন দুপুরে মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে আন্তরিক নয় বলে ওই মিছিলে প্রতিবাদ জানানো হয়। নারী সংরক্ষণ বিল পাশ করাতে কেন্দ্রের উদ্যোগী না হওয়া এবং রাজ্যে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও সরব হন মিছিলের মহিলারা। মিছিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।