১২৭ কোটি মানুষের টিকার খরচের কী হবে? মোদীর সঙ্গে বৈঠকে প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
৩ কোটি প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধার টিকার খরচ কেন্দ্র দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বাকি আম জনতার টিকার কী হবে? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এই প্রশ্ন করেও স্পষ্ট কোনও উত্তর পেলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। তবে রাজ্য প্রথম দফার টিকাদান কর্মসূচিতে যে পুরোপুরি প্রস্তুত তথ্য-পরিসংখ্যান-সহ সেই তথ্যও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মমতা। দাবি তুলেছেন, পরিবহণ ক্ষেত্রের কর্মীদেরও প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে।
দেশে জরুরি ভিত্তিতে দু’টি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন মিলেছে। টিকার ড্রাই রান বা মহড়ার পর এ বার সারা দেশের সঙ্গে ১৬ জানুয়ারি এ রাজ্যেও শুরু হচ্ছে টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগের কাজ। তার আগে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী। উৎপাদন কেন্দ্র থেকে টিকাকেন্দ্রে পৌঁছনো, সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি টিকাদানের প্রক্রিয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পর্যালোচনা করেন মোদী।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ৩ কোটি কোভিড যোদ্ধার টিকার খরচ কেন্দ্র দেবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু বাকি ১২৭ কোটি দেশবাসীর কী হবে? তাঁদের জন্য টিকা কি রাজ্য সরকারকে কিনতে হবে? সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়, পরবর্তী ধাপে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
আরও পড়ুন: ডিভোর্সের নোটিস পাওয়ার পর সুজাতা প্রথম সৌমিত্রর এলাকায়
ভারতে তৈরি ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় তথা শেষ দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শেষের আগেই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে। সেই দিকে ইঙ্গিত করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘অনুমোদন দেওয়া দু’টি টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কোনও তথ্য কি রাজ্য সরকারকে দেওয়া হবে?’’ ছাড়পত্র দেওয়ার আগে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতামত নেওয়া উচিত বলেও মত প্রকাশ করেন মমতা। তাঁর প্রশ্নের জবাবে নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কে পাল বলেন, ‘‘দু’টি টিকাই সম্পূর্ণ নিরাপদ। বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত যে, কোনও টিকারই কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।’’
আরও পড়ুন: শোভন ‘বৈশাখীর গ্ল্যাক্সো বেবি’, মিছিলের পরে বলল তৃণমূল
টিকাদানের কর্মসূচিতে রাজ্য যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত সেটা বোঝাতে তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তর থেকে শুরু করে জেলা এবং ব্লক স্তর পর্যন্ত টিকাদানের টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত ব্যবধানে বৈঠক করে গোটা পরিস্থিতি তদারকি করছেন।’’ কেন্দ্রকে মমতা তথ্য দিয়েছেন, ‘‘টিকা সংরক্ষণের জন্য রাজ্যে মোট ৯৪১টি কোল্ড চেন পয়েন্ট করা হয়েছে। সেগুলি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে ৪৪ হাজার টিকাদান কর্মী এবং ৪ হাজার টিকাকেন্দ্র।’’
কারা টিকা পাবেন, সে বিষয়েও কেন্দ্রকে তথ্য দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, ৫.৮ লক্ষ সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর নাম প্রথম ধাপে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের তথ্য আপলোড করা হয়েছে নির্দিষ্ট পোর্টালে। পরের ধাপে আরও প্রায় আড়াই লক্ষ পুলিশকর্মী এবং ১ লক্ষ ২৫ হাজার পুরকর্মীর তথ্যও নির্ধারিত করা হয়েছে টিকাদানের জন্য। তবে সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের মধ্যে পরিবহণ শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলেছেন মমতা।