মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের প্রাক্তন অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদ্ধতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, যা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। অন্য দিকে, মমতার ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি, ‘‘হাত যখন চেন্নাইয়ে পৌঁছেছে, তখন দিল্লি এবং কলকাতার কালীঘাটেও পৌঁছবে। সেই ভয়েই মুখ্যমন্ত্রী আগেভাগে এ কথা বলে রাখছেন!’’
মমতা বৃহস্পতিবার দিঘায় বলেন, ‘‘কখনও কখনও পদ্ধতি ভুল হয়। আমি আইনি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করছি না। কিন্তু চিদম্বরম এক জন প্রবীণ রাজনীতিক। দেশের প্রাক্তন অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে ভাবে বিষয়টি হয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক, দুঃখজনক ও খারাপ। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, আমাদের দেশের চারটি স্তম্ভ রয়েছে। এক, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, দুই, নির্বাচন কমিশন, তিন, সংবাদমাধ্যম আর চতুর্থ হল বিচারব্যবস্থা। গণতন্ত্র আজ কাঁদছে। বিচারব্যবস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য নয়। বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় বলি, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’’
তৃণমূল নেত্রীর সুরেই কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণের সমালোচনা করেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অভিযোগের তদন্ত হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে আইনকে আইনের পথে চলতে দিচ্ছে না বিজেপির সরকার। চিদম্বরম আদালতের দ্বারস্থে হয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে যার শুনানির দিন ছিল শুক্রবার। অন্তত সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যেত। তা না করে দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে নোটিস আটকে, পাঁচিল টপকে ঢুকে যে ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত অবমাননাকর ও অগণতান্ত্রিক। এর মধ্যে অশনি সঙ্কেত আছে।’’
মমতার ওই মন্তব্যের জবাবে দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা ভেবেছিলেন, দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়া যাবে, তাঁরা এখন বুঝতে পারছেন, সেই দিন চলে গিয়েছে। দেশের মানুষ চান, জনগণের এবং রাষ্ট্রের টাকা যাঁরা লুঠ করেছেন, তাঁদের শাস্তি হোক। সেটা হবেই। আর অন্যায় না করে থাকলে ভয়ের কারণ নেই।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় কংগ্রেসই গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী, সাধ্বী প্রজ্ঞা প্রমুখকে হেনস্থা করেছিল। কংগ্রেস অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে চিদম্বরমকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
অন্য দিকে, জম্মু-কাশ্মীরের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলে দিঘায় আরও বেশি পর্যটক টানার বার্তাও এ দিন দিয়েছেন মমতা। জেলায় দু’দিনের কর্মসূচি সেরে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পর্যটন বাণিজ্যের জন্য দিঘা এখন সেরা জায়গাগুলির অন্যতম। পর্যটকদের কাছেও অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। কারণ কাশ্মীরে তো লোক এখন যেতে পারবে না।’’ আগামী ডিসেম্বরে দিঘায় এশীয় দেশগুলির নির্বাচিত বণিকসভা ও শিল্প সংস্থাকে নিয়ে সম্মেলনের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।