ভার্চুয়াল বৈঠকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা।
ছিল দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক। কথা ছিল মূলত সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা যে ভাষণ সে বৈঠকে দিলেন, তা নির্বাচনী ভাষণের চেয়ে কম কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিকে বৃহস্পতিবার সরাসরি ‘হিন্দু বিরোধী’ রাজনীতি বলে আখ্যা দিলেন নড্ডা। আরও একগুচ্ছ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ২০২১-এ তৃণমূলের সরকারকে ‘উপড়ে’ ফেলার ডাক দিলেন।
রাজ্য বিজেপির নবগঠিত কর্মসমিতির বৈঠক এ দিন বসেছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সংলগ্ন মাহেশ্বরী সদনে। তবে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখে সেখানে বেশি ভিড় জমতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, পর্যবেক্ষক ও সহকারী পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন, রাষ্ট্রীয় কার্যকারিণীর সদস্য মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহরা মাহেশ্বরী সদনেই ছিলেন। কিন্তু অন্য অনেককেই বৈঠকের ভার্চুয়াল লিঙ্ক পাঠিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। বিজেপি সভাপতি নড্ডাও দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই বৈঠকে শামিল হন। তবে তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে আক্রমণের তীব্রতা ছিল জনসভার ভাষণের মতোই ঝাঁঝালো।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ এ দিন খুব জোর গলায় তুলেছেন অমিত শাহের উত্তরসূরি। ৫ অগস্ট অর্থাৎ অযোধ্যায় রামমন্দিরের পুনর্নির্মাণের শিলান্যাসের দিনে পশ্চিমবঙ্গে যে লকডাউন বলবৎ করা হয়েছিল, সে কথা এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন নড্ডা। তার কয়েক দিন আগেই অর্থাৎ ৩১ জুলাই বকরি ইদ ছিল বলে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছিল— এমনও বলেন তিনি। তার পরেই সুর তুঙ্গে তুলে তিনি বলেন, ‘‘এই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি, এই তোষণের রাজনীতি এবং এই হিন্দুবিরোধী মানসিকতা তৈরি করার রাজনীতিই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি।’’
আরও পড়ুন: পরের দিন নিট, ১২ সেপ্টেম্বর লকডাউন প্রত্যাহার, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ জয় করার জন্য বিজেপি কর্মীদের এ দিন ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন নড্ডা। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার জনতা আমাদের আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য তৎপর। তার জন্য আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে, এটাই আমি আপনাদের বলতে চাই।’’ নড্ডার কথায়, ‘‘আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সরকারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। সারা রাজ্যে পদ্ম ফোটাবে বিজেপি।’’ ‘দুর্নীতি’ ইস্যুতে তিনি তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যের শাসক দলকে। আমপানের পরে তৃণমূল রেশনের চাল চুরি করতে ব্যস্ত থেকেছে আর বিজেপি কর্মীরা ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন বলে নড্ডা দাবি করেন।
নড্ডার ভাষণে এ দিন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের উল্লেখও শোনা গিয়েছে। লকডাউনের জেরে যে সব সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কী কী করেছে, বেশ কিছু ক্ষণ ধরে শুধু সে সবেরই খতিয়ান এ দিন তুলে ধরেন নড্ডা। আয়ুষ্মান ভারত বা পিএমকিসান প্রকল্পের সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে পেতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি আক্রমণ করেন। নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদলে দিয়ে সেগুলিকে নিজের প্রকল্প হিসেবে চালাতে চাইছেন বলে দাবি করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে ‘অসহযোগিতা’ করে পশ্চিমবঙ্গকে দেশের মূল ধারার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচ্ছিন্ন করছেন বলে নড্ডা মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: অবশেষে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত রাফাল যুদ্ধবিমান
বিশ্বভারতী নিয়েও এ দিন মুখ খুলতে শোনা গিয়েছে বিজেপি সভাপতিকে। ‘‘কী চলছে বিশ্বভারতীতে!’’— চোখেমুখে বিস্ময়ের ভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করেন নড্ডা। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী এবং জমি মাফিয়ারা বিশ্বভারতীর উপরে আঘাত হানছে বলে তাঁর দাবি। বিশ্বভারতীতে যে কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, তা দেখলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মা চমকে উঠবে, মন্তব্য জে পি নড্ডার।
বিজেপি সভাপতির এই জ্বালাময়ী ভাষণের পরে চুপ করে বসে থাকেনি তৃণমূলও। দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নড্ডাকে আক্রমণ করেছেন। নড্ডার অভিযোগ নস্যাৎ করে পার্থ এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তিনি কতটুকু খবর রাখেন? বা তাঁকে কতটুকু খবর দেওয়া হয়?’’ পার্থর কথায়, ‘‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই সরকার সকলের সরকার, এই সরকার খেটে খাওয়া মানুষের সরকার, কৃষকের সরকার, যুব-ছাত্রের সরকার, সরকারি কর্মচারীদের সরকার, রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের সরকার।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘হিন্দু-বিরোধী’ রাজনীতি করেন বলে যে মন্তব্য নড্ডা করেছেন, তার জবাবে পার্থ বলেন, ‘‘এঁদের এ থেকে জেড পর্যন্ত সব নেতা একই ধরনের কথা বলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাজনীতিটা করেন, তা সবাইকে নিয়ে এবং বাংলার যে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক অধিকার, তাকে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন।’’ পার্থর কথায়, ‘‘আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষকে উপেক্ষা করার রাজনীতি আমরা করি না।’’