রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এ বারই প্রথম শীতকালে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ‘পর্যটন উৎসব’ করতে চলেছে সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা প্রকল্পটি অনুমোদন করায় পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব দফতরের অফিসার, বিভিন্ন এজেন্সি এবং সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর উৎসবের সূচি চূড়ান্ত করেছেন। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পর থেকে বড়দিন, নতুন বছরের মরসুমের মাঝের দিনগুলিতে ফাঁকাই থাকে। নির্দিষ্ট কোনও অনুষ্ঠানও থাকে না। সেই ১৫ নভেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর অবধি, ছ’টি সপ্তাহের প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার থেকে রবিবার তিন দিন উত্তরবঙ্গের আলাদা ছয়টি ‘অফবিট’ গন্তব্যে উৎসব হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।
একেবারেই কম খরচে একযোগে রিসর্ট, হোমস্টে এবং সুইস তাঁবুতে থেকে স্থানীয় শিল্পকলা, সংস্কৃতি, নাচগানকে শুধু উপভোগ করা নয়, লাগোয়া এলাকা ঘুরে দেখা, পাখি দেখা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ক্যাম্প ফায়ার, নানা সুস্বাদু খাবার, ধোঁয়া ওঠা দার্জিলিং চা’র আনন্দ নিতে পারবেন অনলাইনে বুকিং করা পর্যটকেরা বা স্থানীয়রা। প্রত্যেক গন্তব্যে ব্লগ রাইটার থেকে ভ্রমণ লেখক, পর্যটন বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি গন্তব্যকে ধরে পর্যটকদের নিয়ে তথ্যচিত্রও তৈরি করা হবে। পোশাকি নামে উৎসব হলেও পাহাড় বা জঙ্গলে শীতের আমেজের সঙ্গে পর্যটন প্রসারের জন্যই এ আয়োজন। সব মিলিয়ে উৎসবের বাজেট প্রায় ২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সরকারি ভাবে আর কিছু দিন পর উৎসবের ঘোষণা করে দেবে পর্যটন দফতর।
বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গে জেলাগুলিতে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা, সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে পর্যটন মেলা হয়। বাসিন্দারা গিয়ে বিভিন্ন গন্তব্য, সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রয়োজনে বুকিংও করা যায়। এই মেলার ধারণাকেই বদল করে উৎসবের নামকরণ করা হয়েছে বলে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষকে এক একটি এলাকায় এনে সেখানকার সংস্কৃতি, কৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে এলাকাটির দর্শনীয় জায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখানো হবে। সুস্বাদু পদের খাবার, স্থানীয় গান বাজনা এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস-সহ নানা কিছু থাকবে। আমরা ভর্তুকি দিয়েই উৎসবটি চালু করছি। খুব অল্প টাকায় বুকিং মিলবে।’’
পর্যটন দফতরের কয়েকজন অফিসার জানান, ছয়টি গন্তব্যের প্রত্যেকটিতে ১২৫ জনকে রাখা হবে। বাছাই করা এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসবের একটি মাঠ থাকবে। সেখানে ৪০টি সুইস তাঁবু পাতা হবে। এছাড়া থাকবে ১৫টি লাক্সারি ফ্যামিলি টেন্ট। লাগোয়া রিসর্ট এবং হোমস্টেগুলিতে বাকি ৮৫ জন থাকবেন। মাঠে একটি স্থানীয় হাতের কাজের স্টল, একটি স্থানীয় ব্যাঞ্জনের স্টল থাকবে। একটি পর্যটন দফতরের স্টলে বিভিন্ন গন্তব্যের হালহকিকৎ মিলবে। শেষ স্টলটি থেকে রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের প্রচার চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একাধিক গাড়ি, চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স থাকবে। জঙ্গল সাফারি, ক্যাম্পিং, বারবিকিউ থেকে খাওয়া দাওয়া সবই মাঠে হবে। প্রত্যেকের হাতে একটি করে স্মারক উপহার তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এনজেপি এবং বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আনা এবং পৌঁছানোর ব্যবস্থা থাকবে।