শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল না হলে এখনই রাজধানীতে আসছেন না মমতা। ফাইল চিত্র।
নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে ২৭ মে দিল্লিতে আসার সম্ভাবনা খুবই কম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের শীর্ষ স্তর সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল না হলে এখনই রাজধানীতে আসছেন না তিনি। যদিও এর আগে দিল্লির রাজনৈতিক হাওয়ায় গুঞ্জন ভাসছিল যে, ২৭ তারিখের ওই বৈঠকে যোগ দিতে রাজধানীতে আসবেন মমতা।
মঙ্গলবার আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর বৈঠক হয়েছে কলকাতায়। এর আগে মমতা কলকাতায় বসেই বৈঠক সেরেছেন আরও চার অ-কংগ্রেসি বিরোধী নেতার (এসপি-র অখিলেশ যাদব, জেডিএস-এর কুমারস্বামী, জেডিইউ-এর নীতীশ কুমার এবং আরজেডি-র তেজস্বী যাদব) সঙ্গে। এ দিন এক দিকে দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের আনা অধ্যাদেশের বিষয়টিকে সামনে এনে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে বিজেপিকে রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে হারানোর ডাক দিয়েছেন মমতা। তেমনই অন্য দিকে আবার রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, চব্বিশের লোকসভা ভোটের দামামা এ ভাবেই আজ বাজিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু তা বলে এখনই দিল্লিতে এসে কর্নাটক-বিজয় পরবর্তী কংগ্রেসের রমরমা বাজারে গৌরবে বহুবচন হতে চান না তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, কংগ্রেস সম্পর্কে ‘অ্যালার্জি’ বজায় রেখেই তিনি নিজের মতো করে সাজাতে চাইছেন মোদী বিরোধিতার কৌশলের ঘুঁটি। ঘটনাচক্রে, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের সমনের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেছেন, শুক্রবার দিল্লিতে তারও শুনানি রয়েছে।
মমতার কংগ্রেসের প্রতি এই ‘অ্যালার্জি’ কি আখেরে বিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করবে? বিশেষত কর্নাটকের ফলের পরে বিজেপি-বিরোধিতার পালে যখন নতুন বাতাস লেগেছে। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের দাবি, অনেক আঞ্চলিক দলের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা কংগ্রেসের থেকে বেশি। এই তালিকায় রয়েছে আপ, বিআরএস, এসপি-র মতো দল। এ ছাড়া, আলাদা ভাবে জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখছেন মমতা। তবে সূত্রের মতে, নীতীশের ‘অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষার’ দিকটিও তৃণমূলের নজর এড়াচ্ছে না। তিনি একই সঙ্গে মমতার সঙ্গে দেখা করার পরে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গের মতো নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে জোটের রণকৌশল তৈরিতে আগ্রহী। সেই বৈঠক দিল্লিতেই হওয়ার কথা। যদিও তৃণমূলের ইচ্ছা, পটনায় বৈঠক হোক। যেখানে অন্তত তার রাশ কংগ্রেস নেতৃত্বের হাতে থাকবে না।
এটা ঘটনা যে, কর্নাটকে বিপুল ভাবে বিজেপিকে হারানোর পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। কংগ্রেস দ্বিগুণ উৎসাহে বিরোধীদের একজোট করতে সক্রিয়। অন্য দিকে মমতাও তাঁর মতো করে কিছুআঞ্চলিক দলের সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, একশো দিনের কাজে রাজ্যের জন্য বকেয়া টাকা আদায় নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দীর্ঘমেয়াদি আবেদন যখন কাকস্য পরিবেদনার শামিল, তখন সেই কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে ‘জো হুজুরি’ করলে ভুল সঙ্কেত যেতে পারে বলেও আশঙ্কা। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে এটিই নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের শেষ বৈঠক।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা দীর্ঘদিন এই পরিষদের বৈঠক এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু অগস্টে তিনি দিল্লিতে এসে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। গত বছর যখন মমতা নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি এসেছিলেন, সেই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন ছিল। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধীদের দূরত্বও তৈরি হয়েছিল সেই সময়ই।