মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আবার বছর ১৩ পর লোকসভা ভোটে কি বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করবে তৃণমূল? সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করতেই তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর দরজা খোলা। তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। সেই সঙ্গে কৌশলে কংগ্রেসকে মমতা এ-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলায় তাদের মাত্র দু’টি আসন জেতা রয়েছে। জোট হলে ২০১১ সালের পর ফের বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়বে তৃণমূল। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছিল তৃণমূল। তবে ২০১১ সালের পরে আর দু’দলের জোট হয়নি।
মঙ্গলবার দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক। তার আগে স্বাভাবিক ভাবেই আসন সমঝোতা নিয়ে মমতাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’র গত মুম্বই বৈঠকেই তৃণমূল চেয়েছিল আসন সমঝোতার একটি অভিন্ন ফর্মুলা ঠিক করে ফেলতে। কিন্তু তাতে যেমন কংগ্রেসের সায় ছিল না, তেমনই বামেরাও জানিয়েছিল, আসন সমঝোতা হবে রাজ্য স্তরে। সর্বভারতীয় স্তরে তা সম্ভব নয়। তবে এ কথা অনেকেই মেনেছেন, যে রাজ্যে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেই রাজ্যে তারাই আসন বোঝাপড়ার জন্য উদ্যোগী হবে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য। দিল্লিতে কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম এক সঙ্গে বৈঠক করলেও বাংলায় তার সুযোগ কম। তবে এর মধ্যেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মমতার আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়ে গিয়েছে বলে খবর। তাতে গত বারের জেতা দু’টি আসন বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণের পাশাপাশি রায়গঞ্জ আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার ব্যাপারে মমতা প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন বলেও কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি। মমতার সোমবারের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে যে, দু’টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে তিনি প্রস্তুত। তার সঙ্গে আরও দু’টি-তিনটি আসন তিনি কংগ্রেসকে ছাড়বেন কি না, প্রশ্ন সেটাই। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবারের বৈঠকে এসপার-ওসপার হয়ে যাবে। তখনই বোঝা যাবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা ভারতে জোটের ছবি।
কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে সোমবার মমতা বলেন, ‘‘বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে তো ঘণ্টা বাঁধতে হবে!’’ তার অর্থ কী? মমতার জবাব, ‘‘আমি কথা বলার জন্য তৈরি। কিন্তু বাংলায় কংগ্রেসের দু’টি আসন জেতা রয়েছে।’’ অনেকের মতে মমতা আসলে এ কথা বলে কংগ্রেসকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, দর কষাকষি করতে গিয়ে তারা যেন নিজেদের অবস্থা ভুলে না যায়।
গত ২০১৬ সাল থেকে বাংলায় কংগ্রেস শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়ছে না, সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে তাদের জোট হয়েছে অনেকগুলি ভোটে। লোকসভার আগে সিপিএম তথা বামেদের সম্পর্কে মমতা কী ভাবছেন? তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘আমি তো কাউকে জোর করতে পারি না। ওরা (বামেরা) কী করবে, সেটা ওদের বিষয়।’’ মমতা কোনও কড়া মনোভাব দেখাননি। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘যিনি আরএসএসকে স্বাভাবিক মিত্র মনে করেন, তাঁর সঙ্গে কোনও বামদল সংশ্রব রাখতে পারে না। আর বিজেপির বিরুদ্ধে যে যে কারণে আমাদের লড়াই, একই কারণে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই।’’ প্রসঙ্গত, রবিবার প্রয়াত নেতা বাসুদেব আচারিয়ার স্মরণসভায় পুরুলিয়ার কর্মসূচি থেকে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলেছিলেন একই কথা। মঙ্গলবার যাঁর থাকার কথা ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে।
পাঁচ রাজ্যের ভোটে তেলঙ্গানা বাদ দিয়ে হিন্দিবলয়ে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। তার পরে তৃণমূল-সহ একাধিক ‘ইন্ডিয়া’ শরিক পরোক্ষে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র মনোভাবের অভিযোগ তুলেছিল। সোমবার অবশ্য সে সব নিয়ে কোনও কড়া কথা বলেননি মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘পাস্ট ইজ পাস্ট। এখন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে।’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, মমতা সবই বলেছেন। তবে গোটাটাই নমনীয় ভাবে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সব দলকে বাস্তবতা বুঝে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে এগোতে হবে। কোনও ‘অহং’ রাখলে চলবে না।
তবে বাংলায় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল যে চলতে চায়, তা সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। যার মাধ্যমে তিনি ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকের আগে বাংলায় জোটসংক্রান্ত বলটি কৌশলে রাহুল, সনিয়াদের কোর্টেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কী সমীকরণ হবে তা সময় বলবে। তবে জোট হলে ২০১১ সালের পর ফের বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়বে তৃণমূল।