অশান্তি কমলেও ট্রেন এখনও বন্ধ কেন, ক্ষুব্ধ মমতা

নাগরিকত্ব আইন স‌ংশোধনের প্রতিবাদে রেললাইনে, স্টেশনে বিক্ষোভের জেরে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তকে এ দিন কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে লাগাম টানা গেলেও রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। এতে বেজায় ক্ষুব্ধ নবান্ন। মঙ্গলবার সারা দিনেও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু না-হওয়ায় রাজ্য সরকারের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

Advertisement

নাগরিকত্ব আইন স‌ংশোধনের প্রতিবাদে রেললাইনে, স্টেশনে বিক্ষোভের জেরে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তকে এ দিন কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল শুরুর সময়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ছোট দু’‌টো ঘটনা ঘটেছে। তার জন্য দূরপাল্লার ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে।’’ ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় রেল-পুলিশের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘রেলের সুরক্ষা দেওয়া আমার পুলিশের কাজ নয়। তোমার পুলিশ যদি ব্যর্থ হয়, আমি কী করব! তবু তো সাহায্য করেছি। ট্রেনে আগুন লাগানোর জন্য ছ’-সাতশো লোককে গ্রেফতার করেছি। আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ করব, ট্রেন চালু করা হোক।’’

কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে কেন? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘রেল জানিয়েছে, পুরো ক্ষতির হিসেব করতে ১৫ দিন সময় লাগবে। ৭০টি বাস পুড়েছে।’’ কিন্তু তার সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার কী সম্পর্ক, দিলীপবাবুর বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাংলা এখন শান্ত, ছাড়পত্র অমিত শাহের

সিপিএমের পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম অবশ্য ট্রেনে ভাঙচুরের জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’পক্ষের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে যা ঘটেছে, রেল ও কেন্দ্র তার দায় অস্বীকার করতে পারে না। ট্রেনে যখন ভাঙচুর হচ্ছিল, তখন আরপিএফ-কে কেন দেখা যায়নি? আর রাজ্য সরকারও নিষ্ক্রিয় ছিল।’’

দিনভর দোষারোপের এই পালা চলার পরে, সন্ধ্যায় রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ, বুধবার অসম থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে যাওয়া কয়েকটি ট্রেনের চলাচল ফের শুরু হবে। এ দিনই আজিমগঞ্জ-নলহাটি শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ব রেল জানায়, বুধবার থেকে কামরূপ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, সরাইঘাট, কলকাতা-বালুরঘাট তেভাগা এক্সপ্রেস ফের চলবে। তবে কামরূপ এক্সপ্রেসকে কাটোয়া-আজিমগঞ্জ নির্ধারিত রুটের বদলে ব্যান্ডেল থেকে বর্ধমান-রামপুরহাট হয়ে চালানো হবে।

আরও পড়ুন: প্রতিবাদে তৃণমূল-সঙ্গ নয়, বোঝাল সিপিএম

নবান্ন সূত্রের খবর, বিক্ষোভে বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে দিন দুয়েক আগে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মার সঙ্গে কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতার কথা জানিয়ে দ্রুত রেল পরিষেবা শুরু করতে অনুরোধ জানান তিনি। রেল-কর্তৃপক্ষের তরফে পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হলেও পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে, সেই বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে নিশ্চিত আশ্বাস মেলেনি বলে অভিযোগ।

অবরোধ, ভাঙচুরের মুখে পড়েও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করা গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল পারলে পূর্ব রেলে কেন তা সম্ভব হল না, সেই প্রশ্ন উঠছে। নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে রেলের নিজস্ব বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিভিন্ন শাখায় অন্তত ২০টি স্টেশনে গোলমাল হয়েছে। তার মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৫টি স্টেশনের। আজিমগঞ্জ-নিউ ফরাক্কা ছাড়াও কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখায় ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ক্ষতি হওয়ায় মেরামতিতে সময় লাগছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিল্লি থেকে আট কোম্পানি বিশেষ বাহিনী আনা হয়েছে। তার মধ্যে চার কোম্পানি রেলওয়ে প্রোটেকশন স্পেশাল ফোর্স (আরপিএসএফ)। বিভিন্ন রেল থেকে আরও চার কোম্পানি আরপিএফ আনা হয়েছে। নিরাপত্তার দিকে থেকে আশঙ্কা আছে, এমন সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে ওই বাহিনীকে। তবে রেলের পক্ষে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে ওঠা সম্ভব হয়নি এখনও।

মালদহের ভালুকা রোড এবং কুমেদপুর স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুরের ফলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে বলে রেলের খবর। ভালুকা রোড স্টেশনে এ দিন মেন লাইনের সমস্যা মিটলেও লুপ লাইনের সমস্যা মেটানো যায়নি। রেল-কর্তৃপক্ষের আশা, আজ, বুধবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। আপাতত মেন লাইন দিয়ে আজ কিছু যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

বারুইপুর-ডায়মন্ড হারবার শাখার বাসুলডাঙা ও দেউলা স্টেশনে এ দিনও ভোর ৩টে ২০ থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। তার পরে আবার অবরোধ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়, চলে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনের কাছে রেললাইনে স্লিপার ফেলে রাখার অভিযোগও উঠেছে। ওই ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কা দেখছেন রেল পুলিশের আধিকারিকেরা। চালক সময়মতো ট্রেন থামিয়ে দেওয়ায় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। এ দিন সকালে ঢাকুরিয়া স্টেশনেও অবরোধ হয়। রেললাইনের প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে ফেলার অভিযোগও ওঠে। রেল-কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছে। ট্রেনে পাথর ছোড়ার অভিযোগে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বহড়ু স্টেশন থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement