ব্যক্তিজীবন তাঁর নিশ্চয়ই আছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভূমিকাও তো আছে। এই অবস্থায় তিনি ‘প্রেম’ করবেন, নাকি দল করবেন এবং সরকারি দায়দায়িত্ব ঠিকমতো সামলানোর চেষ্টা করবেন?
মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একান্তে জিজ্ঞাসা নয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সব সহকর্মীর সামনেই প্রশ্নচ্ছলে শোভনবাবুকে এ ভাবে বিদ্রুপ ও তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী ও মেয়র ঠিক কী করবেন, সেই ব্যাপারে বৈশাখীর (বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনবাবুর বান্ধবী) অনুমতি নেওয়ার দরকার আছে কি না, সেই কথা তুলেও শোভনবাবুকে কটাক্ষ করেন মমতা।
মেয়রের ব্যক্তিগত জীবনের নানান সমস্যা নিয়ে গুঞ্জন তো অন্তহীন! সেই সঙ্গে সরকারি কাজে তাঁর মনোযোগের অভাব নিয়েও বেশ কিছু দিন ধরে কথা উঠছে বিভিন্ন মহলে। দলীয় সূত্রের খবর, মন্ত্রী ও মেয়র শোভনবাবুকে এর আগে বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ দিন আর নিছক সতর্কতা নয়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে মেয়রকে কড়া ধমক দেন তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়টিও হাট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: অটলে বাম-দ্বিধা, আমন্ত্রিত মমতাও
প্রসঙ্গের সূত্রপাত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে অশান্তিকে কেন্দ্র করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দৃশ্যতই ‘বিরক্ত’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পঞ্চায়েতে অশান্তির নানা ঘটনা নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছিলেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে। তখনই ক্যানিং ও কুলতলিতে অশান্তির ঘটনার কথা টেনে শোভনবাবুকে তীব্র তিরস্কার করেন মমতা। কারণ, পদাধিকারবলে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যাবতীয় সাংগঠনিক কাজকর্ম শোভনবাবুরই দেখার কথা। কেননা তিনিই ওই জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি।
প্রেম ও দল করার মধ্যে মেয়র কোনটা বেছে নেবেন, মুখ্যমন্ত্রী সুস্পষ্ট ভাবে সেটা জানতে চাওয়ায় শোভনবাবু বলার চেষ্টা করেন, প্রকৃত ঘটনার সবটুকু হয়তো মুখ্যমন্ত্রী জানেন না। শোভনবাবুকে তাঁর বক্তব্যের মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, শুধু তিনি বলছেন না, এটা (মেয়র ঠিক কী করতে চান) গোটা বাংলা বলছে। যা দল এবং সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। এই বিষয়ে রাতে ফোনে যোগাযোগ করলে শোভনবাবু বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বাইরে কোনও মন্তব্য বা চর্চা করব না।’’
শাসক দলের একাংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই শোভনবাবুকে এই ব্যাপারে নানা ভাবে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার শেষ রদবদলে শোভনবাবুর হাতে থাকা তিনটি দফতরের মধ্যে একটির দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় জেলায় দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকেও দূরে রাখা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সেই সব হুঁশিয়ারি এবং নানান সিদ্ধান্তের কোনও ইতিবাচক প্রভাব শোভনবাবুর মধ্যে না-দেখে তাঁকে সরাসরি তিরস্কার করার জন্য এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠককেই বেছে নেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি দফতরকে নিয়ে নবান্ন সভাঘরে পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন মমতা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেও শোভনবাবুকে কার্যত উপেক্ষাই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেয়রকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি।