PM Awas Yojana

আবাসে বাড়ি তৈরি করার প্রতিশ্রুতি পালনে পদক্ষেপ নবান্নের, ত্রুটিমুক্ত তালিকা তৈরির নির্দেশ গেল জেলায়

দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের প্রায় অর্ধেক সময় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ ছিল । ২০১৮ সালে যে ‘আবাস প্লাস’ (প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়) শুরু হয়েছিল তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৭:৪৬
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

লোকসভা ভোটের প্রচারে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের খবর, ভোট মিটতেই ওই প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা ফের যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশ মেনে একশো ভাগ ত্রুটিমুক্ত উপভোক্তা তালিকা তৈরির বার্তাও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। এই নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, যে তালিকার ভিত্তিতে টাকা পাওয়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের এত দীর্ঘ টানাপড়েন, তা কি এখনও পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি? যদিও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ভাল। স্বচ্ছতার সঙ্গে সমঝোতা আমরা করি না। একটা ভুল বেরোলেও তো শোরগোল পড়তে পারে। তাই একশো ভাগ খাঁটি তালিকার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

বস্তুত, এই প্রকল্পে ১১ লক্ষ উপভোক্তা ধরলে, রাজ্য সরকারকেই ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা (মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার হিসেবে) খরচ করতে হবে। টানাটানির সংসারে যা খুবই কঠিন। তবে মন্ত্রী-আধিকারিকদের অনেকের মতে, তৃতীয় এনডিএ সরকার অনেকটাই শরিক-নির্ভর। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বে ‘অনমনীয়’ মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বা প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জনও নেই। তাই নতুন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপের আশা করছে রাজ্য। প্রশাসনের একাংশের মতে, সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন তালিকা কেন্দ্রের সামনে তুলে ধরে বরাদ্দ নিশ্চিত করার লক্ষেই জেলা প্রশাসনের চাপ বাড়াচ্ছে নবান্ন।

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের প্রায় অর্ধেক সময় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ ছিল । ২০১৮ সালে যে ‘আবাস প্লাস’ (প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়) শুরু হয়েছিল তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। রাজ্যের দাবি, প্রকল্পের অগ্রাধিকার তালিকায় ৩৩ লক্ষের নাম থাকলেও, প্রয়োজনের নিরিখে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার উপভোক্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের পর্যায়ে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৪ হাজারের নিজস্ব জমি না থাকায় ১১ লক্ষ ২ হাজার উপভোক্তাকেই অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।

Advertisement

এ দিকে, বাজেটের তথ্য অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-২৫) রাজ্যের আয়ের সম্ভাবনা ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। খরচ হতে পারে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় হবে দু’কোটি টাকা বেশি। এই অবস্থায় অত বিপুল বরাদ্দ কী ভাবে ব্যবস্থা করবে রাজ্য? সরকারের অন্দরের বক্তব্য, প্রথম কিস্তিতে ৫০ শতাংশ, পরের দু’টি কিস্তিতে ৪০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ টাকা ছাড়া হতে পারে। কিন্তু তা-ও এই আর্থিক বছরে প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা দিতে হলে খরচ অতিরিক্ত হবে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার সংস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, “তুলনায় দুর্বল সরকার। তাই সুবিধা তো একটু হওয়া উচিত। নতুন মন্ত্রী সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি একটু থিতু হলেই এগোনো হবে। তা ছাড়া, কেন্দ্রই তো ২০২২ সালের নভেম্বরে রাজ্যের উপভোক্তা তালিকাকে অনুমোদন দিয়েছিল!” তাঁর সংযোজন, “তবে এটাও ঠিক, একশো ভাগ নিশ্চিত না হলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন না। তিনি নিশ্চয় ইতিমধ্যেই অর্থ সংস্থানের পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন।” তবে কেউ কেউ এ-ও বলছেন, নতুন মন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা ব্যর্থ হলে রাজ্যের সামনে ধারের রাস্তা তো খোলাই আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement