Mamata Banerjee

পছন্দ হয়নি, মমতার নির্দেশ ‘সুব্রতদা’র মূর্তি বদলানোর

দক্ষিণ কলকাতার একাধিক পুজো উদ্বোধনের ফাঁকেই বিকেলে একডালিয়া এভারগ্রিনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর পরে পুজোর উদ্বোধন করেন তিনি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৬
Share:

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উন্মোচন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পাশে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র

এটা কী হয়েছে? বড্ড তাড়াহুড়োয় করা নাকি? মুখের তো তেমন মিল নেই!

Advertisement

মঙ্গলবার একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে সেই পুজোর কর্তা, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই মন্তব্য করেছেন বলে খবর। এ দিনই ওই মূর্তির উন্মোচন করেন তিনি। ওই সময়ে উপস্থিত পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ তথা সুব্রতের দীর্ঘদিনের সঙ্গী স্বপন মহাপাত্র বলেন, ‘‘গাড়ি থেকে নেমেই সুব্রতদার মূর্তি দেখে এমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়রকে বলেছেন দ্রুত মূর্তি বদলাতে। সুব্রতদার ভাল কিছু ছবি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের ক্লাবকে। তিন মাসের মধ্যে নতুন মূর্তি বসাতে এবং সুব্রতদার নামে পার্ক তৈরি করতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’’ একই মন্তব্য সুব্রতের স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘বড্ড তাড়াহুড়ো করে মূর্তিটা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বদলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’’

দক্ষিণ কলকাতার একাধিক পুজো উদ্বোধনের ফাঁকেই বিকেলে একডালিয়া এভারগ্রিনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর পরে পুজোর উদ্বোধন করেন তিনি। বলেন, ‘‘যিনি এই পুজো নিয়ে মেতে থাকতেন, যে পুজো ছিল তাঁর প্রাণ, যার জন্য আমার সঙ্গে এক মাস ধরে ঝগড়া করতেন। আজ সব আছে, সেই মানুষটাই নেই। এত ভালবাসা, আন্তরিকতা একটা পুজোর সঙ্গে থাকতে পারে, ভাবতে পারিনি।’’

Advertisement

এর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গত কালীপুজোয় সুব্রতদা চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মারা যাওয়ার বয়স তাঁর হয়নি। সব সময়ে চনমনে, আনন্দে থাকতেন। কখনও আমি তাঁর মুখ গোমরা দেখিনি। আমরা তাঁর হাত ধরে রাজনীতি করেছি। বৌদি এবং তাঁর পুরনো দিনের লোকেরা জানেন, আমার কাজই ছিল সকাল আটটার মধ্যে সুব্রতদার বাড়িতে চলে যাওয়া। তার পরে সারা দিন রাজনীতির পরিকল্পনা চলত।’’

সুব্রতের সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি কোনও জেলা ঘুরে ফিরলেই সুব্রতদা দেখা করে বলতেন, গুড়ের কটকটি কিনে এনেছিস? গ্রামের মেলার এই সব জিনিস খেতে খুব ভালবাসতেন। বৌদি খেতে দেবেন না বলে লুকিয়েও রাখতেন। পরিবারের লোকের জন্য অনেককেই করতে দেখা যায়, কিন্তু সুব্রতদার জন্য বৌদি যা করেছেন, ভোলার নয়। আজকে আমার এখানে আসা মানে, এক ঝাঁক দুঃখ বুকে নিয়ে আসা। সবই আছে। প্যান্ডেল আছে, লাইট আছে, মানুষ আছে, পুজো আছে, কিন্তু হৃদয়টাই নেই।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে মঞ্চের এক দিকে দাঁড়ানো সুব্রতের পুজোর সঙ্গীদের অনেককেই পুরনো সব স্মৃতি নাড়া দিয়ে গিয়েছে। সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই এ বার মণ্ডপের প্রবেশপথে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো হয়েছে। ছবির নীচে লেখা নানা উক্তি। মণ্ডপের পাশে তৈরি হয়েছে বইয়ের স্টল। সেখানেও তাঁর ছবি। সুব্রতকে নিয়ে তাঁর স্ত্রীর লেখা একটি বই সেই স্টল থেকে বিক্রি করার পরিকল্পনা হয়েছে।

এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘প্রতি বছর এই পুজোর সঙ্কল্প হত সুব্রতদার নামে। মঞ্চে বসে পুজো সেরে দক্ষিণা দিয়ে উঠে উপোস ভাঙতেন সুব্রতদা। এ বারও মঞ্চে সুব্রতদার বসার জায়গা রাখছি। সেখানে থাকছে তাঁর ছবি।’’ আর এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘এ বার আমরা আড়ম্বরে যাচ্ছি না। ইউনেস্কোর মিছিলে যাইনি, কার্নিভ্যালেও যাব না। জলসাও হবে না।’’

পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ স্বপন বললেন, ‘‘যে দিন মারা গেলেন, সে দিনই হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার কথা ছিল। আমায় বলেছিলেন, কালী ঠাকুর দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে যাস। বিকেলে খিদে পেয়েছিল খুব। হাসপাতালেই শসা, মুড়ির ব্যবস্থা হল। সেই খাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুকে ব্যথা। সব শেষ।’’ এর পরে বললেন, ‘‘প্রায় চল্লিশ বছর হল পুজোর অর্থমন্ত্রী করে দিয়েছিলেন সুব্রতদা। সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে পুজোয় নেমেছিলাম। এখন ক্লাবের অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা আছে। এতে হয়তো আগামী কয়েক বছর চালিয়ে দেওয়া যাবে। তার পরে? সুব্রতদা নেই বলে অনেকেই মুখ ঘোরাচ্ছেন। তবে পুজো করে সুব্রতদার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি বজায় রাখব আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement