Mamata Banerjee

জঙ্গলমহলের রাজনীতি নেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে

হিংসা-নাশকতায় দাঁড়ি টেনে কী ভাবে তাঁর সরকার জঙ্গলমহলে হাসি ফুটিয়েছে, এখানে কোনও অনুষ্ঠানে এলে ফলাও করে তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৭
Share:

বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের ফাঁকে। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রা বেরিয়েছে মহানগরীর পথে। সেই সময়ে জঙ্গলমহলে আদিবাসী দিবস উদ্‌যাপনের মঞ্চে হাজির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার ঝাড়গ্রামে ওই অনুষ্ঠানে সন্তর্পণে রাজনীতির প্রসঙ্গ এড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভবত বুদ্ধ-অঙ্কেই।

Advertisement

হিংসা-নাশকতায় দাঁড়ি টেনে কী ভাবে তাঁর সরকার জঙ্গলমহলে হাসি ফুটিয়েছে, এখানে কোনও অনুষ্ঠানে এলে ফলাও করে তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রে প্রাক্তন বাম সরকারকেও বেঁধেন। তবে শুক্রবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের রাজ্যস্তরীয় উদ্‌যাপন মঞ্চে সে সবের ধারে কাছেই গেলেন না মমতা। উহ্য রইল কুড়মি-কথাও।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘আগে মানুষ এখানে আসতেন স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য। জঙ্গলমহলে পাহাড়, নদী, জঙ্গল নিয়ে রূপসী বাংলার রূপ দেখা যায়।’’ এর পরে বাম জমানায় মাওবাদী নাকশতায় জঙ্গলমহল পর্যটক শূন্য হওয়ার প্রসঙ্গ না তুলে তিনি সোজা চলে আসেন বর্তমানে। জানান, পর্যটক আকর্ষণে ঝাড়গ্রামে ৬৪ একর জায়গায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে টাইগার সাফারি করা হবে।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, মাওবাদী পর্বে ঢুকলেই বুদ্ধবাবুর জমানার প্রসঙ্গ আসত। কিন্তু তাঁর শেষযাত্রার দিনে সে সবে ঢুকতে চাননি মমতা। জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার মতে, ‘‘মনে হয় সচেতন ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওই বিষয় তোলেননি।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বশীল জননেত্রী। বিরোধী অগ্রজ নেতাদের তিনি সম্মান দিতে জানেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারের অবশ্য মত, ‘‘বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের পর বার বার তাঁর আমলে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, জঙ্গলহলের কথা উঠছে। কী ভাবে বিরোধীদের প্রবল বাধায় তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়নি, সেই আলোচনা চলছে। হয়তো বিতর্ক এড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী চুপ থেকেছেন।’’

এ দিন মাত্র এক বার ‘মাওবাদী’ শব্দটি উচ্চারণ করেন মমতা। বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, মাওবাদী হামলায় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারে আমরা পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করেছি।’’ এর পরেই প্রসঙ্গ পাল্টে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জঙ্গলকাপে বিজয়ীদেরও পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের প্রসঙ্গও অনুচ্চারিত থেকেছে। এ দিন কুড়মি প্রসঙ্গেও কোনও শব্দ খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে তেমন কেউ ছিলেনও না। পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো পরে বলেন, ‘‘আমি আমন্ত্রণ পাইনি। পেলেও অসুস্থতার কারণে যেতে পারতাম না।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের ‘মূল মানতা’ (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোর মন্তব্য, ‘‘আমরা হতাশ। আন্দোলনে যাব।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বাঁকুড়ার রানিবাঁধের ঝিলিমিলিতে বিজেপির বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাঁর কথায় অবশ্য কুড়মি প্রসঙ্গ ছিল। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনি কি দেখেছেন তফসিলি জাতি, জনজাতি, কুড়মি-সহ ওবিসি হিন্দু সংরক্ষণ পেয়েছেন?... বাবা সাহেব অম্বেডকর আপনাকে অধিকার দিয়ে গিয়েছেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিনিয়ে নিয়েছেন।’’ নতুন একলব্য স্কুল গড়তে রাজ্য সাহায্য করছে না জানিয়ে শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, ‘‘আজকেও ২৫৫ জনকে বাইরে থেকে এনে পাট্টা দিয়ে চলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য দাবি, এ সব একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement