অর্পিতাকে তোলা হচ্ছে আদালতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১০ দিনের জন্য আবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন ইডি-র বিশেষ আদালতের বিচারক জীবনকুমার সাধুখাঁ। নিজেদের হেফাজতে রেখে অর্পিতাকে জেরা করলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে বলে আদালতে দাবি করেছেন ইডি-র আইনজীবীরা।
বিচারক এ দিন জানিয়েছেন, অর্পিতাকে ইডি হেফাজতে রেখে আগামী ৩ অগস্ট আবার আদালতে তুলতে হবে। ৪৮ ঘণ্টা অন্তর তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে ইডি-কেই। অর্পিতাকে মহিলা পুলিশের সামনে জেরা করতে হবে এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে জেরা করা যাবে না। এ ছাড়া আর কোনও শর্তের কথা বিচারক জানাননি। ইডি সূত্রের খবর, হেফাজতে থাকাকালীন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অর্পিতার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।
অর্পিতা-কাণ্ড সামনে আসতেই সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে নাকতলার একটি পুজো অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা করছেন এবং মঞ্চে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন অর্পিতাও। এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন মমতা। এ দিন বঙ্গ-সম্মানের মঞ্চেই তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা প্যান্ডেলে গিয়েছি পুজো উদ্বোধনে। আমি কী করে জানব, কে কে আছে? মহা মুশকিল! এক মহিলা নাকি সেখানে দাঁড়িয়েছিল। সে নাকি পার্থর বন্ধু। আমি কি ভগবান? জানব কে কার বন্ধু? এক মহিলার ব্যাপার নিয়ে সব মহিলাকে অসম্মান করছেন। মা-বোনেরা আমাদের ঘরের সম্পদ। যদি কেউ খারাপ কাজ করে বিচারে তাকে যা শাস্তি দেওয়া হোক না কেন, আমাদের কেউ তাতে হস্তক্ষেপ করবে না। ওই মহিলার সঙ্গে আমাদের দলের বা সরকারের সম্পর্ক নেই। মিডিয়া যা খুশি দেখাচ্ছে।’’
অর্পিতাকে নিয়ে বঙ্গবাসীর মনে নানা কৌতূহল। সোমবারও তিনি যখন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পৌঁছলেন, তাঁকে দেখার অপেক্ষায় সিটি সেশন কোর্টের আইনজীবী থেকে শুরু করে মুহুরি, পুলিশকর্মী থেকে খুচরো ব্যবসায়ী— ভিড় করেন সকলেই। সোমবার সকালে অর্পিতাকে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। রবিবার রাতে তাঁর পেটে যন্ত্রণা হয়েছে। সকালেও ওই যন্ত্রণা ছিল বলে তিনি তদন্তকারী অফিসারদের জানান। এ দিন প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অর্পিতার শারীরিক পরীক্ষা হয়। বিকেল তিনটে নাগাদ অর্পিতাকে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়। ইডি-র বিশেষ আদালতে অর্পিতাকে হাজির করা হয় সন্ধ্যা ছ’টার পরে। আদালত কক্ষ ভরে উঠেছিল বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যেই। দীর্ঘ সময় পার্থকে নিয়ে ইডি ও আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল জবাবের পরে অর্পিতাকে এজলাসে নিয়ে আসা হয়। লাল টিশার্ট পরা অর্পিতা চুপচাপই দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে আসার আগে এজলাস কক্ষের ভিড়ও হালকা করে দেয় পুলিশ। মহিলা পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যেই তাঁকে রাখা হয়।
অর্পিতাকে হেফাজতে চাইতে সহকারী সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি জানান, প্রচুর নগদ, গয়না, বিদেশি মুদ্রা ছাড়াও মধ্যশিক্ষা পর্যদের অ্যাডমিট কার্ড-সহ একাধিক প্রমাণ অর্পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু কী করে সেগুলি তাঁর কাছে পৌঁছল, তা নিয়ে অর্পিতা মুখ খোলেননি। তাই তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এই টাকা উদ্ধারের ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগনার এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর খোঁজ পেয়েছে বলেও ইডি সূত্রের দাবি। আর এ দিন আদালতে ইডি-র এ-ও দাবি, অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে এমন চুক্তিপত্র পাওয়া গিয়েছে যেখানে পার্থ ও অর্পিতা— দু’জনের নামই রয়েছে। ইডি-র দাবি, এই চুক্তিপত্র থেকেই স্পষ্ট তাঁদের মধ্যে ‘সম্পর্কের গভীরতা’।
অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য অবশ্য জামিনের আবেদন করেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে অর্পিতা তদন্তকারীদের হেফাজতে। কিন্তু টাকা, গয়না ও কিছু নথি উদ্ধার ছাড়া তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি। অর্পিতা তদন্তে সহযোগিতা করছেন। অযথা তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, পার্থর সঙ্গে তদন্তকারী অফিসার রাজ্যের বাইরে। ইডি পার্থ ও অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলতে চায়। তাই তদন্তের স্বার্থে জামিনের আবেদন না করে অল্প দিনের জন্য হেফাজতের আবেদন করেন অর্পিতার আইনজীবীরা।
রবিবার সিজিও কমপ্লেক্সে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়েছিল অর্পিতার গাড়ি। এ দিন আদালতে অর্পিতার নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁর আইনজীবী। ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘সোমবার সকাল থেকেই অর্পিতার গাড়ির কনভয়ের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’