জগদীপ ধনখড়
পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনখড়ের নাম ঘোষণা হল। আর মুখ্যমন্ত্রী তা প্রথম জানলেন সংবাদপত্রের কাছ থেকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে নতুন রাজ্যপালের নাম জানান, তার খানিক ক্ষণ আগে রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। শাহকে ফোনে মমতা বলেন, ‘‘আমি আগেই নতুন রাজ্যপালকে স্বাগত জানিয়েছি।’’ যার অর্থ, কেন্দ্র যে ‘চিরাচরিত সৌজন্য’ রক্ষা করে রাজ্য সরকারকে আগে নতুন রাজ্যপালের নাম জানায়নি, সেই ‘খোঁচা’ মমতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিলেন। পরে টুইট করেও শাহের টেলিফোন এবং তাঁর উত্তর জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বর্তমান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জুলাই। নতুন রাজ্যপাল পদে থাকাকালীন রাজ্যে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন হবে বলে মনে করা যায়। সেই দিক থেকে ভাবী রাজ্যপাল ধনখড়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ধনখড় রাজস্থানের শেখাওয়াতি এলাকার ঝুনঝুনুর লোক। তাঁর বাড়ি কিঠানা গ্রামে। রাজ্যের ব্যবসা তথা রাজনীতিতে মারওয়াড়ি সমাজের ভূমিকা যথেষ্ট। তাঁদের বড় অংশ শেখাওয়াতি এলাকার। ফলে বিজেপি নেতৃত্ব মারওয়াড়ি সমাজকে ইতিবাচক বার্তা দিলেন বলেও অনেকের অভিমত।
বিদায়ী রাজ্যপাল কেশরীনাথ সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জগদীপ প্রথাগত অর্থে সঙ্ঘ পরিবারের লোক নন। তবে, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে বাছাই করার পিছনে আরএসএস-এর সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলেই বিজেপির অন্দরের খবর।
রাজস্থানের নেতা জগদীপ জাঠেদের ওবিসি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে দিল্লিতে সক্রিয় ছিলেন। তার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে নিয়মিত ওকালতি করেছেন। কিছু মামলা লড়েছেন কলকাতা হাইকোর্টেও। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনতা দলের টিকিটে লোকসভায় সাংসদ ছিলেন। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের জমানায় সংসদীয় প্রতিমন্ত্রীও হন। এর পর কংগ্রেস ঘুরে ধনখড় বিজেপিতে যান ২০০৩-এ। অজমেরের কিষণগড় থেকে বিধায়কও হন। বিজেপিতে এসে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরএসএসের মতাদর্শ প্রচার শুরু করেন ধনখড়। ‘ব্যক্তির নিজের চরিত্রের মতো রাষ্ট্রীয় চরিত্রও শুদ্ধ হওয়া উচিত’ বলে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের বাণী তিনি তুলে ধরেছেন। এ-ও লিখেছেন, হিন্দু রাষ্ট্রের অর্থ এই নয় যে সেখানে মুসলমানরা থাকবেন না।
সম্প্রতি ফেসবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকৃত ছবি পোস্ট করার জন্য বিজেপির যুবনেত্রী প্রিয়ঙ্কা শর্মাকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রিয়ঙ্কা মুক্তি পাওয়ার পরে টুইটারে তা তুলে ধরেন ধনখড়। আবার লোকসভা ভোটের আগে রাফাল প্রশ্নে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধনখড় লিখেছিলেন, রাহুল গাঁধী বারবার মিথ্যে বলে তা গোয়েবলসের মতো সত্যে পরিণত করতে চাইছেন। সব মিলিয়ে দেশের বর্তমান শাসকদের নজরে তাঁর ‘প্রিয়’ থাকার কারণ যথেষ্টই।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।