মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে নবান্নে সর্বদল বৈঠক। ফাইল চিত্র।
করোনা এবং আমপানের জোড়া ধাক্কায় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। মোকাবিলা কোন পথে, আলোচনা করতে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সর্বদল বৈঠক শুরু হয়েছে নবান্নে। কিন্তু তিন মাস আগের সর্বদল বৈঠকটায় বিরোধীদের সুর যেমন ছিল, আজ ততটা নরম থাকবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। সর্বদল বৈঠকের আগের দিন বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের তরফ থেকে যে রকম মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে বৈঠকে তোপের মুখে পড়তে হতে পারে রাজ্য সরকারকে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সাহায্য করেনি, এই অভিযোগে বিজেপি-কেও বিঁধতে চায় বাম-কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনায় আরও বেশি জোর দিতে চায় তিন বিরোধী-ই।
বিকেল ৩টে থেকে নবান্নে সর্বদল বৈঠক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠক হচ্ছে। তৃণমূলের তরফ থেকে যোগ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করেছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে দিলীপ নিজেই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সঙ্গে গিয়েছেন বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা এবং রাজ্য দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ফোন পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। ফোন গিয়েছিল বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কাছে। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের কারণে মান্নান বৈঠকে যেতে চাননি। তাই কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে সোমেন পাঠিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রকে।
সিপিএমের প্রতিনিধি দলে অবশ্য কোনও পরিবর্তন নেই। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করতে মাস তিনেক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সর্বদল বৈঠক করেছিলেন, সেখানে যে দু’জন গিয়েছিলেন সিপিএমের তরফ থেকে, সেই রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিধানসভার বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীই এ বারও যোগ দিয়েছেন বৈঠকে।
তবে প্রতিনিধি দলে পরিবর্তন থাক বা না থাক, বিরোধী শিবিরের সুর যে এ দিন বৈঠকে অন্য রকম হবে, সে আভাস মঙ্গলবার থেকেই মিলতে শুরু করেছে। লকডাউনের জেরে তৈরি হওয়া আর্থিক সঙ্কট এবং ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত হয়ে পড়া এলাকার জন্য যে ত্রাণের বন্দোবস্ত হয়েছিল, তার বণ্টনে প্রবল অনিয়ম হয়েছে বলে সব ক’টি বিরোধী দলের অভিযোগ। বিজেপি, কংগ্রেস এবং বাম, সব দলই এই বিষয় নিয়ে এ দিনের বৈঠকে সরব হতে চায়।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে এর আগে দু’বার চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠিতে যা লিখেছিলাম, তার উপরেই কথা বলব।’’ লকডাউনের মধ্যে রেশনে অনিয়ম ও আমপান-এর ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগই মূলত ছিল দিলীপবাবুর চিঠিতে। সেই সঙ্গে মৃতদের সৎকারে ‘অসংবেদনশীলতা’র কথাও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলতে চান বিজেপি নেতারা।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের
প্রায় একই সুর বাম ও কংগ্রেসেরও। সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র যে টাকা দেয়নি, সেই কথা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি সাঙ্ঘাতিক মাত্রায় পৌঁছেছে। কোনও দিন যে পান চাষ করেনি, সে পান বরোজের জন্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে যাচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো পুলিশকে জানাতে গেলে থানা অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের স্বীকৃতিপত্র দিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন ডেকেছেন, এগুলোও তাঁর জানা দরকার।’’ প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘বাড়ির ক্ষতিপূরণের ফর্ম এমন ভাবে করা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষকে পঞ্চায়েত বা স্থানীয় স্তরে কারও উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে এবং সেই সুযোগে অনিয়ম হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনও ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ
তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের তরফ থেকে এই ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। এখন রাজ্যের পরিস্থিতি যে রকম, তাতে সব রকম ভাবে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়নোই উচিত বলে তৃণমূল নেতৃত্বের মত। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘‘বিশেষ পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এমন একটা উদ্যোগের পাশে সকলে থাকবেন, এটাই প্রত্যাশিত। আশা করব, বিরোধীরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই বৈঠকে আসবেন।’’ রাজ্যের শাসক দলের সেই প্রত্যাশা বিরোধীরা আজ পূরণ করেন করবেন, নাকি কঠোর সমালোচনার রাস্তায় হাঁটবেন, রাজনৈতিক শিবিরের নজর থাকছে সে দিকেই।