গোটা বলিউড ‘দাদামণি’ বলে সম্বোধন করত প্রয়াত অশোককুমারকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বাঙালি ‘দাদামণি’ সম্বোধন শুনেছে অনেক আগে। প্রয়াত অশোককুমারকে গোটা বলিউড ‘দাদামণি’ বলে সম্বোধন করত। অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে তাঁর হাঁটুর বয়সী সহশিল্পী। কিশোরকুমারের সহোদর অশোককুমার ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়ম ‘দাদামণি’।
সেই ‘দাদামণি’ সম্বোধন বাঙালি আবার শুনল সোমবার। রাজ্য বিধানসভায়। য়খন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না-করে বললেন— ‘দাদামণি’!
তবে অশোককুমারের সঙ্গে শুভেন্দুর একটাই তফাত— বলিউডের প্রবীণ অভিনেতার ক্ষেত্রে সেই সম্বোধন ছিল সম্মান এবং সম্ভ্রমের। আর শুভেন্দুর ক্ষেত্রে তীব্র কটাক্ষের! মমতা কখনওই শুভেন্দুর নাম নেন না। সোমবার বিধানসভায় তাঁর ভাষণেও নেননি। নাম না-করে খোঁচা দিতেই শুভেন্দুকে ‘দাদামণি’ বলেছেন। কারণ, বিরোধী দলনেতাই ছিলেন মূলত মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের লক্ষ্য।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার আগে থেকেই শুভেন্দুর নাম সে ভাবে প্রকাশ্যে মমতার মুখে শোনা যায়নি। নন্দীগ্রামে ভোট পর্বেও অনেক সময় ‘একজন’ বলেই শুভেন্দুকে বোঝাতেন মমতা। অন্য দিকে, শুভেন্দুও মমতাকে সম্বোধন করতে কখনও ‘মাননীয়া’, কখনও ‘পিসিমণি’ বলেছেন। তবে রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশন চলাকালীন শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীকে ‘দিদিমণি’ বলে সম্বোধন করেন। রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার দিনই শুভেন্দু বলেছিলেনন, ‘‘দিদিমণি অবসর নিয়ে নিলেও আচার্য হতে পারবেন না! বিল দিল্লিতে পড়ে থাকবে!’’
সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে সম্প্রতি আলোচনায়-থাকা চাকরি সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে বলছিলেন মমতা। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক লক্ষ চাকরি দিতে গিয়ে ১০০টা ভুল হতেই পারে। তা শুধরে নিতে হবে। এবং সময় দিতে হবে। বেকারদের আমরা চাকরি দেব। তাতে যদি কোনও সমস্যা হয়, তা মিটিয়ে নিতে হবে।’’
এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কড়া ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ‘‘আর যে দাদামণি চাকরি দিয়েছেন, তাঁর হিসেব কে নেবে? সিবিআই তাঁদের ধরবে না? মেদিনীপুর থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে উত্তর দিনাজপুর। সেই সব জায়গায় দাদামণি চাকরি দিয়েছেন।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা শুভেন্দুকে আক্রমণ করে মমতা আরও বলেন, ‘‘মন্দারমণির নাম তো এখন ‘দাদামণি’ হয়ে গিয়েছে।’’
তার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে দাদামণি-জল্পনা তুঙ্গে। শুভেন্দুকে আচমকা ‘দাদামণি’ বলে সম্বোধন করলেন কেন মমতা? অনেকে বলছেন, শুভেন্দুর ‘দিদিমণি’ সম্বোধনের জবাবে মমতার ‘দাদামণি’। আবার অনেকের বক্তব্য, ওই সম্বোধনে মমতা পুরনো কথাও মনে করিয়ে দিলেন। শুভেন্দুর দলত্যাগ-পর্বে তৃণমূলের নীচুতলার অনেকে ‘আমরা দাদার অনুগামী’ বলে স্লোগান তুলেছিলেন। সেই মর্মে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত পোস্টার-ফেস্টুন-হোর্ডিংও দেখা যেত। ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পর (যদিও শুভেন্দু নিজে নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়েই জিতেছিলেন) যাঁদের অনেকেই এখন এসেছেন তৃণমূল শিবিরে। সেই ‘দাদা’-কেই কটাক্ষ করে মমতা ‘দাদামণি’ বলেছেন।
দাদামণি-জল্পনায় অংশ নিয়েছেন স্বয়ং ‘দাদামণি’ও। মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তৃতার মধ্যেই শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন (ওয়াকআউট)। পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি তো ওঁর থেকে ১৭ বছরের ছোট। আমাকে ‘দাদামণি’ বলছেন কেন? আমাকে তো ‘ভাইসোনা’ বলা উচিত ছিল!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।