ফাইল চিত্র।
ত্রিপুরা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে সরব হওয়ার পরে এ বার লড়াইকে আরও বড় মাত্রা দিতে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে আঙুল তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভার ভোট-যুদ্ধে শাহ ছিলেন বিজেপির সেনানায়ক। মমতার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত তিনি পেরে ওঠেননি। এ বার ত্রিপুরাতেও প্রথম থেকে শাহকেই রাজনৈতিক আক্রমণের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর অভিযোগ, ত্রিপুরায় তৃণমূলের উপরে হামলা হয়েছে শাহের নির্দেশেই। পাশাপাশি, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি অবশ্য মমতার এই অভিযোগ মানতে চায়নি।
ত্রিপুরায় বিজেপির ‘হামলা’য় আক্রান্ত তৃণমূলের ছাত্র-যুব প্রতিনিধিদের রবিবার রাতেই কলকাতায় আনেন অভিষেক। তাঁদের দু’জন সুদীপ রাহা ও জয়া দত্ত এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন। ঝাড়গ্রাম রওনা হওয়ার আগে সোমবার মমতা তাঁদের দেখতে যান। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় বিজেপি দানবীয় দল চালাচ্ছে! ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করা হয়েছে, পাথর ছোড়া হয়েছে, গুলিও চালানো হয়েছে। আহতদের ৩৬ ঘণ্টা চিকিৎসা করা হয়নি। এক গ্লাস জলও তাঁদের দেওয়া হয়নি!’’ তার পরেই মমতা বলেন, ‘‘ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর এত সাহস হতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই হামলা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।’’
দিল্লিতে এ দিন সকালেই সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদেরা। ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও'ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, মৌসম বেনজির নূর, অর্পিতা ঘোষ, অপরূপা পোদ্দার-সহ বেশ কিছু সাংসদ। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ফেরাতে হবে’, ‘ত্রিপুরায় স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’। পাশাপাশি চলে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্লোগান।
ত্রিপুরা প্রশাসনের সমালোচনা করে এ দিন মমতার দাবি, ‘‘ওরাই মারল, আবার ওরাই ভোরে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল। জয়ার গাল লাল হয়ে গিয়েছে, কান ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুদীপেরও কান ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সামনে মারধর করা হয়েছে।’’ হাসপাতালে গিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাসও।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে অবশ্য কটাক্ষ করেছে এ রাজ্যের বিজেপি। ত্রিপুরা বিজেপি হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ রাজ্যের দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ যত বাড়বে, ২০২৪-এ বিজেপির আসন-সংখ্যা ততই বাড়বে।’’
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিষেক সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় বলে দেওয়া হয়েছে যে, প্লেনে যেন টিকিট না দেওয়া হয়। কোনও প্লেন, হেলিকপ্টার ভাড়া না দেওয়া হয়। নানা রকমের প্ল্যান করেছে। এমনকি, অভিষেক যদি বিমানে যায়, তা হলে ওর পাশের পাঁচটা সিটে গুন্ডা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে! সুতরাং, ওর জীবনে বিপদ রয়েছে। বিজেপির নিজের রাজ্যে মানুষকে সেবা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। অন্য রাজ্য নিয়ে চিৎকার করছে। চোরের মায়ের বড় গলা! আগামী দিন ত্রিপুরায় আমরা জয় করব, এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের জবাবেও কটাক্ষের সুরে শমীক বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। বিমানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশপাশে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁদের গ্রেফতার করে প্রকৃত তথ্য সামনে আনা হোক!’’
ত্রিপুরার পরিস্থিতি নিয়ে বড় রকমের প্রচারে নামতে চলেছে তৃণমূল। আগরতলায় এ দিন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলার প্রশাসনকে হেয় করতে নানা রকম কমিশন পাঠানো হচ্ছে। ত্রিপুরায় তো রাজনৈতিক কর্মসূচির উপরে আক্রমণ হয়েছে। সেখানে মানবাধিকার কমিশনের দল পাঠানো হচ্ছে না কেন?’’ তৃণমূল নেতা সমীর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ত্রিপুরায় অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে! কারও কোনও স্বাধীনতা নেই।’’