সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধার্ঘ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ধর্মতলা এলাকায় নেতাজি মূর্তির পাদদেশে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
রামমন্দিরের পাল্টা নেতাজি-আবেগকে সামনে রেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তীব্র আক্রমণ ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ধর্মতলায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মমতার মন্তব্য, “দেশের নেতা তাকেই বলে, যার একপাশে থাকে হিন্দু, আরেক পাশে থাকে মুসলমান। আরেক পাশে থাকে শিখ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ। আজ তার দেখা কোথায়?”
প্রসঙ্গত, সোমবার শহরে সংহতি মিছিলে হাঁটার সময়ে মমতার পাশে ঠিক সে ভাবেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে সে দিনই রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে গোটা দেশে রামরাজত্বের আবেগ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন মোদী। এ দিনের নেতাজি-মঞ্চ থেকে মমতার মন্তব্য, “এখন দেশের জন্য কোনও পরিকল্পনা নেই। প্ল্যানিং এখন কিলিং। ব্রুটালিটি (হিংস্রতা), ঘৃণা রাজনীতি এবং বিভাজনের মধ্যে চলে গিয়েছে।” মমতার সংযোজন, “নেতাজির মতো নেতা আর জন্মাল না। তিনি বলেছিলেন, আমরা দেশ-স্বজাতিকে ভালবাসি না। তাই আমরা গৃহবিবাদ করি। আমাদের মধ্যে জন্মায় মীরজাফর-উর্মিচাঁদ, তারা আজও মরেনি। তাদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, রামমন্দিরের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনে আবেগ এবং প্রচারের সুর বেঁধে দিয়েছেন মোদী। এ দিন মমতা বলেন, “নিজের লেখায় তিনি (নেতাজি) বলেছিলেন ত্যাগ এবং উপলব্ধি থাকতে হয়। বলেছিলেন, ষোল আনা পেতে গেলে ষোল আনা দিতে হবে। কিছু না দিয়ে পেয়ে যাব, এটা হয় না। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে নেতাজি যা বলে গিয়েছিলেন, সেগুলি মান্য করে আমরা চললে ভারত আরও উন্নত এবং বড় দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত হতে পারত।”
রামমন্দির উদ্বোধনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কার্যালয়গুলিতে অর্ধ দিবসের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তার উল্লেখ না করে মমতা বলেন, “২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও নেতাজির জন্মদিনটায় জাতীয় ছুটি ঘোষণা করাতে পারলাম না। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, লজ্জিত। এ দেশে রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ছুটি হয়ে যায়, কিন্তু যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দেন, তাঁরা কাঁদেন।” বিজেপির প্রতিশ্রুতির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতার অভিযোগ, “এই বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের উদঘাটন করবে। তার পরে সব হয়ে যায়, নেতাজিকে তারা ভুলে যায়। নেতাজির নামে একটা বন্দর এবং ডক ছিল, সেটা বদলে দেওয়া হয়েছে। নেতাজির তৈরি করা পরিকল্পনা কমিশনও তুলে দেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে নীতি আয়োগ। যার না আছে নীতি, না আছে আয়োগ। মোমের পুতুলের মতো ঘাড় নাড়ে, মনকা, দিলকা বাত শোনায়।”
এ দিন অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের মুখ্য, প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র। ইতিহাসবিদ সুগত বসু, চন্দ্র বসু।