Mamata Banerjee

মূর্তি ভাঙা, ভাষা, এনআরসি: বিদ্যাসাগরের ভিটেয় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে ‘ত্রিশূলে’ বিঁধলেন মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় যে বিজেপি-ই সে কথা স্পষ্ট ছিল তাঁর প্রতিটি আক্রমণেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৬
Share:

বীরসিংহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।

ভোটের মরসুমে কণ্ঠস্বর তুঙ্গে তুলেছিলেন যে ইস্যুতে, মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় দাঁড়িয়ে আবার ফিরিয়ে আনলেন সেই আক্রমণ। কোনও রাজনৈতিক দলের নাম করলেন না। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ফের আঙুল তুললেন প্রতিপক্ষের দিকে। মাতৃভাষা নিয়ে কোনও রকম আপস না করার বার্তা দিলেন। তার সঙ্গে জুড়ে দিলেন এনআরসি প্রসঙ্গও। বীরসিংহে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যেন ‘ত্রিশূলে’ বেঁধার চেষ্টা করলেন বিজেপি-কে।

Advertisement

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ পালন করতে রাজ্য জুড়েই নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্রের জন্মভিটেয় এ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজ্য সরকার। সেখানে বিদ্যাসগরের একটি আবক্ষ মূর্তি এ দিন মুখ্যমন্ত্রী উন্মোচন করেন।

পরে নিজের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অকালবোধনের মতো বিদ্যাসাগরের মূর্তি আমাদের নতুন করে স্থাপন করতে হল। কারণ, একদল উন্মত্ত, দানবীয় শক্তি গিয়ে মূর্তিটা ভেঙে দিয়ে এল।’’ কলকাতায় অমিত শাহের রোড শোয়ের দিনে বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার দিকেই যে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত করলেন, তা বুঝতে রাজনৈতিক শিবিরের অসুবিধা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘একটা মাটির মূর্তি ভাঙলে আবার তৈরি করা যায়। কিন্তু ওটা একটা মাটির মূর্তি নয়। ওটা একটা শিক্ষা, একটা সভ্যতা, একটা সংস্কৃতি, একটা দর্শন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: তেলই পুড়ছে সিবিআইয়ের, সাঁতরাগাছি থেকে মেচেদা ঘুরে রাজীব সেই অধরা​

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় যে বিজেপি-ই সে কথা স্পষ্ট ছিল তাঁর প্রতিটি আক্রমণেই। কিন্তু বিতর্ক এড়ানোর বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী সযত্ন ছিলেন। এক বারও বিজেপির নাম উচ্চারণ করেননি। তবে, বাঙালি স্বাভিমানে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করে তিনি বলেন, ‘‘মাকে সম্মান না জানিয়ে মাসিকে সম্মান জানানো যায় না। নিজের মাটিকে সম্মান না জানিয়ে অন্য কাউকে সম্মান করা যায় না।’’

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতেই এনআরসি নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ ভয় দেখিয়ে বলছে, ১৯৭১ সালের সার্টিফিকেট চাই। না হলে নাকি এনআরসি হবে। কোনও এনআরসি হবে না।’’ এই প্রথম নয়, এ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও বলেছেন। এনআরসি-র বিরোধিতা করে কলকাতায় তিনি মিছিলও করেছেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় দাঁড়িয়ে এ দিন যে ভাবে তিনি বাঙালি অস্মিতার সঙ্গে জুড়ে দিতে চেয়েছেন এনআরসি ইস্যুকে, তা কিছুটা নতুনই। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বাংলা থেকে কেউ কাউকে তাড়িয়ে দিতে পারবে না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বসতবাটিতে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি, কোনও এনআরসি বাংলায় হবে না।’’

আরও পড়ুন: ঊর্মিমালাকে কদর্য আক্রমণ সোশ্যাল মিডিয়ায়, সরব বিদ্বজ্জনেরাও​

ভাষা ইস্যুতেও এ দিন সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কী ভাবে বাংলা বর্ণমালা এবং ব্যাকরণকে পথ দেখিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গ তোলেন। নিজের ভাষার মর্যাদার কথা যে সর্বাগ্রে মাথায় রাখা উচিত, তা মনে করিয়ে দেন। হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করা উচিত কি না, তা নিয়ে এখন গোটা দেশেই বিতর্ক। সেই বিতর্কেও বিজেপি-কে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা প্রথম থেকেই করেছেন মমতা। বীরসিংহেও এ দিন তিনি সেই পথেই হাঁটেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement