বাঁ দিকে বিড়লা তারামণ্ডল থেকে পদযাত্রা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।ছবি: পিটিআই।
যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগেই সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্বঘোষণা মতো শনিবার সেই ইস্যুতে কলকাতায় মিছিল করলেন তিনি। মিছিল-শেষে যোগী প্রশাসনকে যেমন বিঁধলেন, তেমনই বিজেপির বিরুদ্ধেও সুর চড়ালেন। এদিন তাঁর বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছে, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের বেশ কিছুটা আগেই প্রচারের রাজনৈতিক সুরটি বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। হাথরসের ঘটনাকে সামনে রেখে গ্রামে গ্রামে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দিলেন তৃণমূল কর্মীদের।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই তাঁর জেলাসফর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। উত্তরবঙ্গের সেই সফরের প্রশাসনিক বৈঠকে ভোটের আগে সমস্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর এ দিন দিলেন রাজনৈতিক দিকনির্দেশ। অর্থাৎ, করোনা আবহেই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক— উভয়দিক থেকেই তাঁর ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।
শেষ বার পদযাত্রা করেছিলেন লোকসভা ভোটের প্রচারে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ফের পথে নামলেন মমতা। কেন এই পরিস্থিতিতেও পথে নামতে হল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমরা অতিমারির জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিলাম না। অথচ বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে মিটিং-মিছিল করছি।’’
আরও পড়ুন: হাথরস কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে মমতা, নিশানা বিজেপিকে
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল শেষ হতে না হতেই হাথরস-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন কলকাতার পথে যৌথ প্রতিবাদে নামে বাম-কংগ্রেস। বিকালে মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। তাদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের মিছিল করতে বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও বাধে সংগঠনগুলির সদস্যদের।
হাথরস-কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার হাথরস রওনা দিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেখানে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ-প্রশাসনের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান ডেরেক ও’ব্রায়েন। মহিলা সাংসদদেরও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘আমার মন হাথরসে পড়ে আছে। ওই পরিবারটিকে দেখার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামে ঢোকার ১ কিলোমিটার আগে সকলকে আটকে দেওয়া হয়। প্রতিমা মণ্ডলকে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ড্রাইভিং সিটে প্রিয়ঙ্কা, হাথরসের পথে রাহুল
হাথরসের ঘটনা প্রসঙ্গে দিল্লির হিংসার কথাও এ দিন তুলেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি সকলের পদবি নিয়ে খেলা করছে। দেশের দলিত, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কৃষকদের ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে। অথচ এই সুযোগে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে তফসিলি জাতিপ্রধান গ্রামে গিয়ে প্রচার চালাতে বলেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে প্রতিবাদ কর্মসূচিও শুরু করতে বলেছেন।