মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে সম্মুখসমরে ‘বাঙালিয়ানা’ সামনে রেখেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আরও একবার বাঙালি আবেগ তুলে ধরার পথই নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রনায়ক শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক বক্তৃতার মতোই মমতা এ দিন বলেন, ‘‘আমায় দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমি খুব জেদি।’’
বুধবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে দলীয় জনসভায় এই বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি যে শাড়িটা পরি তা তাঁতের শাড়ি, নদিয়া বা মুর্শিদাবাদের। গায়ে যে বস্ত্র সেটাও বাংলার।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি চিন্তনে বাঙালি, দর্শনে বাঙালি, মননে বাঙালি।’’
রাজনীতি ও প্রশাসনের জোড়া ফলায় এ দিন বিরোধীদের বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রতি ‘বঞ্চনা’র অভিযোগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজ করেন গরিব মানুষ। এক বছর ধরে কেন্দ্র দেড় কোটি মানুষের সেই টাকা দিচ্ছে না। অথচ পরপর পাঁচ বছর আমরা ওই কাজে দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছি।’’ এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত দেবে না? আমাদের এখান থেকে জিএসটি বাবদ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছ।’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘জবকার্ড আছে এমন ২৮ লক্ষের কাজের ব্যবস্থা করেছি। কেন্দ্রীয় সরকার জেনে রেখ, আমাকে তুমি দাবিয়ে রাখতে পারবে না। যেমন করেই হোক, ১০০ দিনের কাজে মানুষেরা যাতে বঞ্চিত না হয়, আমি সেই ব্যবস্থা করব।’’
রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মমতা এ দিন অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তৃণমূলকে অপদস্থ করার চেষ্টা চলছে। সরাসরি রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ওঠা অভিযোগের কথা না বললেও তিনি বলেন, ‘‘অর্থই অনর্থের মূলে। দু’একটা লোক খারাপ কাজ করতে পারে। তাদের আদালতে বিচার হবে। তবে হাতের পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। যে ভুল করে তাকে সংশোধন করতে হবে। কিন্তু এ-সব সব থেকে বেশি করে বিজেপি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে যাতে কাজ করতে না পারে সে জন্য আমাদের নেতাদের বাড়িতে এজেন্সি পাঠিয়ে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। এরা তৃণমূলের সম্মান নষ্ট করতে চাইছে।’’ মধ্যপ্রদেশের ‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি’র প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘কতজন শাস্তি পেয়েছে? সেখানে শিক্ষামন্ত্রী কি গ্রেফতার হয়েছিল?’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘দেখি কত জনকে গ্রেফতার করতে পারে!’’
নোটবন্দি থেকে শুরু করে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি— এ সব নিয়েই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করার পাশাপাশি রাজ্যে তাঁর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সরকার বিনাখরচে কত সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের সরকার মানবিক। আর লড়তে হচ্ছে একটা দানবিক সরকারের বিরুদ্ধে।’’ সেই সূত্রেই তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি আর ক্ষমতায় আসবে না। বিহারে নেই, ঝাড়খণ্ডে নেই। কর্নাটক, কেরলে হারবে। তামিলনাড়ু, উত্তর-পূর্ব ভারতে পারবে না।’’ গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে আগের মতো সব আসন পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১০০ দিনের টাকা বন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত স্তরে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির জন্য ১০০ দিনের টাকা বন্ধ হয়েছে। যে পরিমাণ মাটি কাটার হিসেব দেওয়া হয়েছে, তা হলে বাংলায় আরও একটা কাঞ্চনজঙ্ঘা তৈরি হয়ে যেত!’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ওঁকে দাবিয়ে রাখার কী আছে, কে-ই বা রাখবে? উনি তো প্রধানমন্ত্রীকে ধরে আছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না! প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির প্রশ্রয়ে বেঁচে আছেন!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘দিদি দেখাতে চান, মোদীর বিরুদ্ধে তিনি একাই লড়ছেন, আর কেউ লড়ছে না! কিন্তু ভোট এলেই দিদি-মোদী রফা হয়ে যায়। প্রয়োজন এলে কাজ হয়ে যায়। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জগদীপ ধনখড়কে নিয়ে যেমন হয়েছিল। এখনও দিদি মোদীর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না।’’
সুজন আরও বলেন, ‘‘চুরি করলে, খুন করলে, টাকার পাহাড় জমালে, বেআইনি সম্পদের ভান্ডার করলে সম্মান বাড়ে? যাদের এই সবে মান-সম্মান যায় না, তাদের মান কিছু আছে নাকি?’’