মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল প্রতিহিংসাপরায়ণ দল নয়। যদি সে রকম হত, তা হলেই অনেকেই গ্রেফতার হতে পারতেন। দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র পুজোসংখ্যা প্রকাশের মঞ্চ থেকে নাম না করে সিপিএম ও বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহার করে শুধু মাত্র বিরোধীদের দলের নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল। রবিবারও মমতা বললেন, ‘‘ওদের মাথার উপর চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারার মতো নানা রকম এজেন্সি রয়েছে। যারা চোখে দেখেও দেখতে পায় না।’’
রবিবার মহালয়ার দিন ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যা প্রকাশ করল তৃণমূল। সেই মঞ্চ থেকেই বিরোধীদের একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের গাল দিন, কিছু যায় আসে না। যাঁরা এগুলো করছেন, আরও বেশি করে করুন। এগুলো করে যদি শান্তিতে ঘুমোতে পারেন, নিশ্চয়ই ঘুমোবেন। আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। বদলা নয়, বদল চাই বলেছিলাম বলেই ৩৪ বছরের কাউকে গ্রেফতার করিনি। অনেক কর্মকাণ্ড থাকা সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’’ এর পরেই নাম না করে মমতা নিশানা করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। বলেন, ‘‘আর যাঁরা দিল্লিতে বসে আছেন...। যিনি খেয়েছেন, তিনি পস্তেছেন। যিনি খাননি, তিনিও পস্তেছেন। মনে রাখবেন, ওদের মাথার উপরে চন্দ্র, সূর্ষ, গ্রহ, তারার মতো নানা রকম এজেন্সি বসে আছে। যারা চোখে দেখেও দেখতে পায় না।’’
মমতার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা কটাক্ষ করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর পার্টির লোক চোর বলে দুনিয়ার সবাইকে চোর ভাবছেন উনি। কেউ যদি সত্যিই দোষ করে থাকেন, আইন তাঁকে সাজা দেবে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভ্যাসবশত মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলে চলেছেন। কঙ্কাল খোঁজা, অস্ত্র খোঁজা, পার্টি অফিস ভাঙচুর করানো, মিথ্যে মামলা দিয়ে সিপিএম নেতা-কর্মীদের জেলে পাঠানো কোনও কাজ বাদ রাখেনি তাঁর সরকার। এমনকি ২১ জুলাই নিয়ে কমিশন করেও সেই রিপোর্ট পেশ করতে পারেননি উনি। সিপিএম চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে, আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করে দেখান।’’
দলীয় মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘‘আমাদের সবাই খারাপ। ওঁরা একা ভাল। এক সময় দিল্লিতে গিয়ে লজ্জা হত। বাংলাকে বদনাম করাই একদল লোকের কাজ। বাংলার বদনাম করলে, এখানকার মানুষকে অসম্মান করলে আমার রাগ হয়। প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু কর্মকাণ্ড থাকেই। কিন্তু আজকাল একটি ছবি বেরোলেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। আমরা কি এই সংস্কৃতির অবক্ষয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি! আমাদের সংস্কৃতি তো মাথা উঁচু করে চলা, গর্ব করে চলা!’’
বাংলার মানুষ এ সব করেন না। বাইরে থেকে ধার করা লোকজনই সমাজমাধ্যমে এ সব ঘটান বলেও দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এগুলো বাংলার মানুষ করছেন না। বাইরে থেকে ধার নেওয়া কিছু লোক, কিছু ডিজিটালকে (সংস্থা) টাকা দিয়ে তৈরি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত এমন কোনও লোক নেই, যার নামে উল্টোপাল্টা বলা হয় না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একদল মানুষ এই কাজ করে চলেছে। তার চেয়ে বাংলায় কী কী উন্নয়ন হয়েছে, ভাল কাজ কী হয়েছে, তাতে নজর দিলে বাংলার অনেক উপকার হত।’’