ভাতা বাড়ল রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের।
সরকারের আয় কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে সব দলের বিধায়কদের কাছে প্রস্তাব চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভার মধ্যেই তাঁকে শুনতে হল, মেলা-খেলায় খরচে রাশ টানলেই সরকারের অনেকটা সাশ্রয় হবে। আবার একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মন্ত্রী ও বিধায়কদের দৈনিক ভাতা এক হাজার টাকা করে বাড়ানো হবে। তবে মাসের দুই পক্ষ কালের মধ্যে দু’টি করে মোট চারটি বিধানসভার বৈঠকে হাজির থাকলে তবেই বিধায়কদের ওই ভাতা প্রাপ্য হবে।
বিধানসভায় শুক্রবার পরিবহণ দফতরের প্রশ্নোত্তর-পর্ব চলাকালীন বড়ঞার কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক জানতে চান, দূরের এলাকা থেকে যে সব রোগীকে নিয়মিত ডায়ালিসিসের জন্য কলকাতায় আসতে হয়, তাঁদের যাতায়াতের ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার কোনও চিন্তাভাবনা সরকারের আছে কি না। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জবাব দিতে উঠলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিরোধীরা সব কিছুতেই ছাড় চান! টাকাটা কোথা থেকে আসবে ভেবে দেখেছেন? খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো কত রকম প্রকল্পে ছাড় দিচ্ছে সরকার। আয় না বাড়লে খরচ করব কোথা থেকে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আয়ের রাস্তা একমাত্র আবগারি দফতর। আগের সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের জন্য বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হয়।’’ তার পরেই বিধায়কদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিন না আপনারা।’’
বিরোধী দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী তখন হাত তুলে জানতে চান, ‘‘পরামর্শ দেব?’’ মুখ্যমন্ত্রী তাতে বিশেষ আমল না দিলেও মনোজবাবু চিৎকার করে বলেন, ‘‘এই সব খেলা-মেলা বন্ধ করা হলে রাজ্য সরকারের অর্থের অভাব হবে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী-সহ শাসক দলের মন্ত্রী-বিধায়কেরা অবশ্য মনোজবাবুকে বলেন, ‘‘বসুন! বসে পড়ুন!’’ এর পরে আবার মুখ্যমন্ত্রীই ঘোষণা করেন, মন্ত্রী ও বিধায়কদের দৈনিক ভাতা এক হাজার টাকা করে (মাসে ৩০ হাজার) বাড়ানো হবে।
পরে সভার বাইরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও মনোজবাবু বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের বিধায়কদের বেতন ও ভাতা অন্য রাজ্যের তুলনায় কম। বিধানসভার এনটাইটেলমেন্ট কমিটিতে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, মন্ত্রী ও বিধায়কদের উপার্জনে বৈষম্য দূর হোক। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় মন্ত্রী ও বিধায়কদের ফারাক থেকেই গেল।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘অনেক প্রবীণ, প্রাক্তন বিধায়ক দুর্দশার মধ্যে আছেন। প্রাক্তন বিধায়কদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানো বেশি জরুরি ছিল।’’
বিজেপি নেতা মুকুল রায় অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বিধায়কদের ভাতা বাড়িয়েছেন, ভাল কথা। কিন্তু ভাতা বাড়ানোর বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে? তবে কাটমানির যে ৭৫% টাকা দলীয় তহবিলে মুখ্যমন্ত্রী জমা রেখেছেন, সেখান থেকে সরকার ঋণ নিক! তা হলেই আর্থিক সঙ্কট অনেকটা মিটবে।’’