মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ড ঘিরে রাজ্য জুড়ে নাগরিক প্রতিবাদের পরে প্রথম ভোট-যন্ত্রে রায় দেওয়ার সুযোগ আসছে রাত পোহালে। রাজ্যের পাঁচ জেলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন কাল, বুধবার। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বিধায়কেরা গত লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের শূন্য আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। ওই ৬ আসনের মধ্যে পাঁচটিই ছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে কেবল মাদারিহাট কেন্দ্র ছিল বিজেপির হাতে।
উপনির্বাচনে শাসক দলের আশা, এ ফল হতে চলেছে ৬-০! লোকসভা ভোটের পরেই চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফল যেমন শাসকের অনুকূলে ৪-০ হয়েছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, আর জি কর-কাণ্ডে ‘শহুরে প্রতিবাদে’র প্রভাব যে বৃহত্তর জনমানসে নেই, উপনির্বাচনেই তার প্রমাণ মিলবে। আর বিরোধী শিবিরের আশা, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে নাগরিক সমাজ যে ভাবে প্রতিবাদী চেহারা দেখিয়েছে, সেই ধারা বজায় রেখেই ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে উপনির্বাচনে মানুষ নিজেদের ভোট নিশ্চিত করতে বেরোবেন।
এই দফার উপনির্বাচনের জন্য প্রচার শেষ হয়েছে সোমবার। একেবারে শেষ মুহূর্তে দলের জন্য ভোট চেয়ে আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিনের সফরে দার্জিলিং রওনা হওয়ার আগে এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরে মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলা সব সময়েই আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা ৩৬৫ দিনই আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব। তাই আপনাদের ভোট দয়া করে তৃণমূল কংগ্রেসকে দেবেন। তাতে আপনার এলাকার উন্নয়নের কাজ তরান্বিত হবে। আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, লোকসভা আমাদের প্রার্থীদের জিতিয়েছেন। তাঁরা কাজ করছেন। করবেনও।’’ পাহাড়ে যাওয়ার আগে কলকাতায় তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘দীর্ঘ দিন দার্জিলিঙে যাওয়া হয়নি। আমি চাই পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সে সকলে ভাল থাক।’’
বিকেলে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মানুষের কাজ আমরাই করছি, আগামীতে আমরাই করব। সিতাই ও মাদারিহাটে (উত্তরবঙ্গে) আমাদের প্রার্থী রয়েছে৷ আরও চার জন রাজ্যে আছে। মাদারিহাটে আমরা কোনও দিন জিতিনি। আমার আবেদন, এ বার তৃণমূলের প্রার্থীকে জেতান।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে বিস্তর হইচই ও প্রতিবাদ হলেও তা মূলত শহুরে এলাকায় সীমিত ছিল। গ্রামীণ এলাকায় তার বিশেষ কোনও ছাপ পড়েনি। এখন যে ৬ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন, তার মধ্যে নৈহাটি ও মেদিনীপুরে শহরাঞ্চল আছে বেশ কিছুটা। সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা ও হাড়োয়া মূলত গ্রাম-অধ্যুষিত। তৃণমূল শিবিরের দাবি, উপনির্বাচনে স্থানীয় প্রশ্ন ও উন্নয়নের নিরিখে মানুষ শাসক দলকেই ভোট দেবেন। বিরোধীদের ‘অস্তিত্ব’ আরও বিপন্ন হবে।
শাসকের ‘দাপটে’র বাইরে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে ভোট এবং গণনাই বিরোধীদের কাছে প্রধান উদ্বেগের। সে কথা মাথায় রেখেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আহ্বান, ‘‘আমরা চাই, মানুষ বেরিয়ে এসে যাকে ইচ্ছে হবে, ভোট দিন। তাঁদের যদি মনে হয় অন্য কাউকে ভোট দেবেন, সেই ফল মাথা পেতে নেব। কিন্তু ভোটটা করতে হবে। পঞ্চায়েত, পুরসভার মতো ভোট করতে গেলে কিন্তু প্রতিরোধ হবে। আমি বলে যাচ্ছি, অশান্তি হলে দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ সুপার।’’
এ বারের উপনির্বাচনে বিজেপির কাছে যেমন চ্যালেঞ্জ ভোট ধরে রাখা, তেমনই বামেদের লক্ষ্য ভোট কিছুটা বাড়ানো। বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে সিপিএম এ বার নৈহাটি আসন ছেড়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনকে, হাড়োয়ায় বামফ্রন্ট ফের সমর্থন করছে আইএসএফ-কে। সিপিএম নেতৃত্বের আশা, সুষ্ঠু উপনির্বাচন হলে অন্তত চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁদের ভোট বাড়বে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘যাঁরা মনে করেছিলেন বিজেপি পারবে তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে, তাঁরা ডাবল ঠকেছেন! বিকল্প বামই।’’
বামেদের হাত ছেড়ে কংগ্রেস এ বার ৬ কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে। প্রচারের শেষ দিনে হাড়োয়া কেন্দ্রের মধ্যে বারাসত-২ ব্লকের কাঁচকল মোড় থেকে শাসনের বোয়ালঘাটা পর্যন্ত মিছিল করার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের মন্তব্য, ‘‘মানুষ জোট বাঁধলে কেউ কিছু করতে পারবে না। সব গুন্ডার থেকে বড় গুন্ডা হচ্ছে মানুষ! মানুষ যদি সমর্থন করেন, আমাদের প্রার্থী জিতবেন।’’