—ফাইল চিত্র।
মন্ত্রী-বিধায়কদের সাম্মানিক বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি। সোমবার জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদেরও সাম্মানিক বা বেতন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সভাঘরে জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সাম্মানিক বাড়াতে রাজ্য সরকারের ২২০ থেকে ২২৫ কোটি টাকা খরচ হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট হয়নি এবং পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ নির্বাচিত সদস্যই তৃণমূলের। সাম্মানিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অংশকেই পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে পঞ্চায়েত সদস্যদের ‘আর্থিক অবস্থা’ বিবেচনা করেই যে সাম্মানিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সবাই পঞ্চায়েত সদস্যদের দোষগুণ দেখি। এক বারও ভাবি না, এঁরা কী ভাবে চলেন! অনেকের গাড়ি-ভাড়াও থাকে না। অফিস যেতেও তো খরচ হয়।’’ তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী পঞ্চায়েতের তিন স্তরের প্রায় ৬০ হাজার নির্বাচিত সদস্য বর্ধিত সাম্মানিক পাবেন।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, সাধারণ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ, সাধারণ সদস্য এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, উপ সমিতির সঞ্চালক ও সাধারণ সদস্যদের সাম্মানিক বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা পরিষদের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্যদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব এবং পঞ্চায়েতসচিবও। তবে বিরোধী দলের কোনও পঞ্চায়েত সদস্যই এ দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পাননি বলে অভিযোগ।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কাজকর্মের ক্ষেত্রে তাঁরা খুব একটা গুরুত্ব পান না বলে বিভিন্ন সময়ে অনুযোগ-অভিযোগ করেন জেলা পরিষদের সদস্যেরা। এ দিনের বৈঠকে তাঁদের কয়েক জন অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিধায়কেরা উন্নয়নের কাজকর্মে নাক গলান। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, সমিতি এবং পঞ্চায়েতের কাজে বাইরের কেউ মাতব্বরি করবে না। একমাত্র জেলা পরিষদের সদস্যেরাই তিনটি স্তরে কাজ দেখতে পারবেন। এমনকি বিধায়কদেরও কাজ করতে হবে জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই ‘কোনও কিছুর বিনিময়ে কোনও কাজ করা যাবে না’ বলে দলীয় জেলা পরিষদের সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। সব কাজেই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা এ দিনের বৈঠকে বারবার বলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কাজের ক্ষেত্রে সব সময় এলাকা পরিদর্শন করতে হবে প্রতিনিধিদের। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আগে ‘বাংলা’ কথাটি লেখা আছে কি না এবং সেই সব প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে খোঁজখবর করতে হবে।’’ সপ্তাহে দু’ঘণ্টা করে জেলা পরিষদে বসে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সব মনোমালিন্য দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার কথা এ দিনের বৈঠকে বলেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু। তিনি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজের কথা বললেও বৈঠকে ডাক পাননি জেলা পরিষদের মেন্টরেরা। পঞ্চায়েতসচিব এম ভি রাও বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদের সদস্যদের জানান, যে-কোনও কাজের গুণগত মানের দিকে নজর রাখতে হবে। সমালোচকদের একাংশের মতে, ‘কাটমানি’র দাপটেই কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে সমস্যায় পড়ছেন ঠিকাদারেরা। অনেক সময়েই ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, কাটমানির পরিমাণ ‘বৃদ্ধি’র ফলে সব সময় গুণমান বজায় রাখা যায় না।
কিছু দিনের মধ্যেই জেলা পরিষদের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। সেখানেও থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজকর্মের অগ্রগতি নিয়ে ছ’মাস পরে একই রকম বৈঠক করবেন তিনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।