রাম নয়, সমস্যা রাজনীতি, নিজের ‘জয় শ্রীরাম’ ক্ষোভের ব্যাখ্যা দিলেন মমতা

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য পাল্টা জবাব, ‘‘বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’কে মোটেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে না। সমাজের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই স্লোগান দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এতে কী সমস্যা হচ্ছে, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে এ বার রাজনৈতিক ভাবে প্রতিরোধের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের ‘শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন’ মানুষের কাছে তাঁর আহ্বান, যারা ঘৃণা ছড়িয়ে, মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংবিধান ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, তাদের যথাযথ উত্তর দিতে হবে।

Advertisement

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য পাল্টা জবাব, ‘‘বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’কে মোটেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে না। সমাজের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই স্লোগান দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এতে কী সমস্যা হচ্ছে, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’

রবিবার বিকেলে ফেসবুকে একটি লম্বা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের বাংলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলা চিরকালই ঐক্য এবং উন্নত চিন্তার কথা বলেছে। কিন্তু বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল বাংলায় নেতিবাচক রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে।’’

Advertisement

মমতার বক্তব্য, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজস্ব স্লোগান থাকে। তা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তাঁরা যেমন ‘বন্দে মাতরম’, ‘জয় হিন্দ’ বলেন, তেমনই বামপন্থীরা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলেন। এই সমস্ত স্লোগানকেই বাংলা সম্মান করে। আবার ‘জয় সিয়া রাম’, ‘জয় রাম জি কী’, ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’— এই উচ্চারণগুলির সঙ্গে সামাজিক ভাবাবেগ জড়িয়ে। সেই সামাজিক ভাবনাকেও তিনি সম্মান করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি সেই ধর্মীয় এবং সামাজিক ভাবাবেগকে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির প্রয়োজনে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। এবং সে জন্যই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটিকে ব্যবহার করছে। এখানেই তাঁর আপত্তি। আরএসএসের এ ধরনের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বাংলা গ্রহণ করে না বলেই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এই ভাবেই বাংলায় হিংসা এবং বিভেদের রাজনীতির জমি তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। সকলের একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা দরকার।

নির্বাচনের প্রচার পর্ব থেকেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল বাংলায়। একাধিক বার বিজেপির এই স্লোগানের তীব্র বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের প্রচারের সময়ে এবং ফলপ্রকাশের পরে, কয়েক দিন আগে নৈহাটি যাওয়ার পথে ‘জয় শ্রীরাম’ শুনে গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে দিলীপবাবুরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যত এর প্রতিবাদ করবেন, তাঁরা তত বেশি এই স্লোগান দেবেন। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে যাবেন, সেখানেই এখন তাঁকে এই স্লোগান শুনতে হবে।’’

‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানোর প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে বিজেপি। দলের ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ এ দিনই দাবি করেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অন্তত ১০ লক্ষ ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা পোস্ট কার্ড পাঠানো হবে মমতার বাড়ি এবং নবান্নের ঠিকানায়। কয়েক হাজার পোস্ট কার্ড ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়ে গিয়েছে। দিল্লি-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও মমতার বাড়িতে পোস্ট কার্ড পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা দলের ঘোষিত কর্মসূচি নয়। কিন্তু দলের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই উদ্যোগী হয়ে এ কাজ করছেন। দল তা আটকানোর চেষ্টা করবে না।’’ সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশ থেকেও কয়েক হাজার পোস্ট কার্ড এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির ঠিকানায় পোস্ট করা হয়েছে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মতে, ‘‘বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বহু দিন ধরেই ব্যবহার করছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় মনে হচ্ছে, এই প্রথম বিজেপি এমন করছে! বাংলায় আমরা ‘জয় শ্রীরাম’ শুনতে অভ্যস্ত ছিলাম না। বাংলায় তাকে জনপ্রিয় করে তোলার দায় মুখ্যমন্ত্রী কি অস্বীকার করতে পারেন?’’ সুতরাং পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘জয় শ্রীরাম’ই আপাতত বঙ্গ রাজনীতির নিয়ন্ত্রক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement