তৃণমূল ভবনে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
হিন্দু-মুসলিম ছেড়ে, বাঙালি এবং অবাঙালিদের মধ্যে ভাগ করতে চাইছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে অবাঙালিদের সঙ্গে বৈঠকে গেরুয়া শিবিরকে কাঠগড়ায় তুলে এই বার্তাই দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন অবাঙালিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। একই সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ ধবনি নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের তোলা বিতর্কের জবাবও ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার অবাঙালিদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা সকলে বাংলাকে নিজের মতো ভাবুন। ‘জয় বাংলা’ বলুন।’’ এর সঙ্গেই মমতা টেনে এনেছেন রাজ্যভিত্তিক ‘অস্মিতা’র প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন উত্তরপ্রদেশ যাব তখন ‘জয় উত্তরপ্রদেশ’ বলব। মধ্যপ্রদেশ গেলে ‘জয় মধ্যপ্রদেশ’ বলব। বিহার গেলে ‘জয় বিহার’ বলব। আবার রাজস্থান গেলে ‘জয় রাজস্থান’ বলব। এ রাজ্যে বাঙালি এবং অবাঙালিদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই।’’ বৈঠকে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘এখন হিন্দু-মুসলিম ছেড়ে, বিজেপি বাঙালি-অবাঙালি ভেদাভেদ করছে। ওদের একটা সিঙারা দিয়ে দিন, আর বলুন, যাও, আর গিয়ে, খেয়ে শুয়ে পড়ো। আজ আপনাদের বেশি দায়িত্ব রয়েছে। আমি চাই, বাঙালিদের থেকেও আপনারা বাংলাকে বেশি ভোট দিন। যাতে আগামী দিন আমরাও দেখিয়ে দিতে পারি আমরা আপনাদের জন্য কী করতে পারি।’’
বৈঠকে শ্রোতাদের প্রশ্ন করার ঢংয়েই মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের কারও কোনও দিন কাজে অসুবিধা হয়েছে? টাটা, বিড়লা হোক বা অন্য কেউ, কারও অসুবিধা হয়নি। আমি চাই, বাঙালিদের থেকে বেশি ভোট আপনারা আমাদের দিন। আমি দেখিয়ে দিতে চাই, আমরা সবাই এক।’’ এর পরই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আমি আপনাদের জন্যে লড়ছি। আমাকে বেইজ্জত করলে আপনাদের দায়িত্ব সেটা প্রতিরোধের।’’রাজ্য প্রশাসনেও বাঙালি এবং অবাঙালি ঐক্যের ছবিও তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমি বিহারের রাজীব সিংহকে সিএস করেছিলাম। আমার ডিজি হরিয়ানার লোক। সচিব গোপালিকা বিহারের। রাজীব কুমার উত্তরপ্রদেশের। এঁরা আমার সঙ্গে এক পরিবার হয়ে ভাল কাজ করছে।’’
বিজেপিকে লক্ষ করে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন, ‘‘এরা জানে না আমিও স্ট্রিট ফাইটার। আমাদের অভ্যেস আছে।’’ ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের বিরুদ্ধে এ দিন ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। বলেন, ‘‘আমার দেখে দুঃখ লাগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন এসে ঝাড়গ্রামে রাজনীতি করছেন। আর আমরা ওখানে গিয়ে কত সমর্থন করেছিলাম। তোমরা খেতে দেবে না, পরতে দেবে না, ৩৬৫ দিন কী হবে দেখবে না। আর ভোটের সময় ভোট দিন, ভোট দিন বলবে। তা হলে আমরা কোথায় যাব? হেমন্ত সোরেন বাংলায় ভোট চাইলে, ঝাড়খণ্ডে অনেক বাঙালি আছেন। আমরাও সেখানে গিয়ে তাঁদের ভোট চাইব। আমি কি রাজস্থানে ভোট চাইতে যাই?’’ তৃণমূল নেত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আপনারা যদি এ রকম করেন, আমরাও করব। প্রথমে ঝাড়খণ্ড সামলান।’’
গত ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্র সরকারকেই বিঁধেছেন মমতা। গোটা বিষয়টিকে ‘ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর’ বলে ব্যাাখ্যা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে ফের এক বার সুর চড়িয়েছেন তিনি।