সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
সাগরদিঘির প্রশাসনিক সভার আগে জেলার ‘অনুন্নয়ন’ নিয়ে খোলা চিঠি প্রকাশ করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবারের সভা থেকে ৯৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯১টি প্রকল্পের শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিলেন, ‘উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি করে না রাজ্য সরকার।’
শুধু বার্তা নয় সাগরদিঘির ধুমারপাহাড়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমি মুর্শিদাবাদে বার বার আসি। পারিবারিক সূত্রেও সাগরদিঘির সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। দলের বিধায়ক নেই বলে এ জেলার জন্য কাজ করব না, এমন মনোভাব আমার নেই। আমরা সব এলাকার মানুষের পাশেই দাঁড়াবো।’’ যে উত্তরে কংগ্রেসের অভিযোগের ‘জবাব’ দেখছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, তাঁদের তরফে নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যার প্রতিটিরই জবাব এড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে বিমাতৃসুলভ আচরণ চলছে, কংগ্রেসের বরাবরের অভিযোগ এমনই। জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্যবাবুর অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাজ্য সরকার অনুমোদন না দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ৫৫টি রাস্তার প্রায় ২০৪ কিলোমিটার সংস্কার করা যাচ্ছে না। খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়, মুর্শিদাবাদের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। কংগ্রেসের তরফে আরও অভিযোগ হল, কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী সভাপতি বলে রাজ্য প্রশাসন ২০১২-র পর থেকে জেলা ‘মনিটরিং অ্যান্ড ভিজিল্যান্স কমিটি’র বৈঠক ডাকেনি। ফলে, উন্নয়নের খতিয়ান নেওয়ার প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে।
জেলা তৃণমূলের নেতারা কখনই সে দাবি মানেননি। অভিযোগকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি জেলা প্রশাসনও। এ দিনের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি সে প্রসঙ্গে না গিয়েও জেলার উন্নয়নের জন্যে রাজ্য সরকার কী কী করেছে, বা আগামী দিনে কী কী করার পরিকল্পনা রয়েছে, সে খতিয়ান তুলে ধরেন। কেমন? মমতার কথায়, ‘‘এ জেলায় বর্তমানে ২ টাকা কিলো দরে চাল পান ১৯ লক্ষ মানুষ। জানুয়ারি থেকে এই চাল দেওয়া হবে আরও তিন গুণ বেশি, অর্থাৎ ৫৬ লক্ষ মানুষকে। ৩৫ কিলো করে মাসে চাল-গম পাবে প্রতি পরিবার।’’ মমতার দাবি, ‘‘আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমির ব্যবস্থা রাজ্য সরকারই করে দিয়েছে।’’
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• সভায় বিক্রি হল না মমতার ছবি, হতাশ অশোক-কৃষ্ণেরা
তৃণমূলের প্রতি মুর্শিদাবাদবাসীর ভরসা আছে, প্রচুর মানুষের ভিড়ে সে প্রমাণ দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জনতার প্রতি এ বার মমতা তুলে ধরেন একের পর এক প্রতিশ্রুতির ডালা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মুর্শিদাবাদে ২০ হাজার ছাত্রী কন্যাশ্রীর ভাতা পাচ্ছে, ১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বৃত্তি পাচ্ছে, ৭১ শতাংশ মানুষের কাছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে— যা আগের কোনও সরকার করেনি। সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলান্যাস করেন পঞ্চম ইউনিটেরও। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘বর্তমান সরকার সাড়ে চার বছরে সরকারি হাসপাতালে ২৫ হাজার শয্যা বাড়িয়েছে। ১৮টা কিষান মান্ডি চালু হয়েছে। জানুয়ারিতে আরও চারটি কিষান মান্ডি চালু হবে। জল ধরো, জল ভরো কর্মসূচিতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার পুকুর কাটা হয়েছে। ৪৪০ কোটি টাকা দিয়ে কান্দি মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হয়েছে।’’
এ দিন মঞ্চ থেকেই সভায় হাজির বিদ্যুৎ সচিব এবং পিডিসিএলের সিএমডি-র নাম করে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন যাঁরা তৃতীয় ইউনিটের কাজ করেছেন সেই সব কর্মীদের যেন ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। মুর্শিদাবাদ ছাড়ার আগেই জানিয়ে যেতে ভুললেন না আবার জেলা সফরে আসবেন তিনি। এ দিন সভামঞ্চে জেলাশাসক, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন, দলের তিন বিধায়ক চাঁদ মহম্মদ, ইমানি বিশ্বাস ও সুব্রত সাহা বা পিডিসিএলের সিএমডি, বিদ্যুৎ সচিবদের সঙ্গেই দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন পর্যবেক্ষক তথা গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকেও।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মিনিট চল্লিশের বক্তব্যে তাঁর খোলা চিঠির কোনও উত্তর না পেয়ে আশ্চর্য হননি জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার। তিনি বলেন, ‘‘জেলার উন্নয়ন হলে তো ভাল কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল থাকে না। প্রশাসনিক সভায় সভাধিপতিকে আমন্ত্রণ জানানো ‘সাংবিধানিক সৌজন্য’, এ জেলায় সেটাও মানেন না তিনি!’’ ‘‘গণতন্ত্রের পক্ষেও এটা বিপদজনক প্রবণতা’’— সংযোজন সভাধিপতির।