অভ্যর্থনা: রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন রাজ্যপালের স্ত্রী সুদেশ ধনখড়ও। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ঘোষিত অবস্থান হল ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে বিষয়টি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের এক ঘণ্টার বৈঠকের এই হল নির্যাস। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে যান। বেরিয়ে আসেন প্রায় সাড়ে ছ’টায়। তাঁর কথা, ‘‘রাজ্যপালকে হ্যাপি নিউ ইয়ার জানাতে গিয়েছিলাম। এটা স্বাভাবিক সৌজন্য। আমি এটা করি। রাজ্যপাল এবং তাঁর স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছি।’’ রাজ্যপালও পরে টুইটে লেখেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে রাজভবনে স্বাগত জানিয়েছেন। তিন জনের একসঙ্গে হাসিমুখের ছবিও টুইট করেন তিনি।
রাজনৈতিক মহল অবশ্য এই সাক্ষাৎকে নিছক সৌজন্যের ঊর্ধ্বে বিভিন্ন কারণে অর্থবহ বলে মনে করছে। রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের বিরোধ বাড়তে বাড়তে দৈনন্দিন তিক্ততায় পৌঁছেছে। প্রায় নিয়মিত কোনও না কোনও প্রসঙ্গে সরকারকে তুলোধনা করেন ধনখড়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শাসক দলের প্রতি আমলা ও পুলিশকর্তাদের ‘পক্ষপাতিত্ব’, রাজ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হয় না বলে খোঁচা— এ সবই তাঁর নৈমিত্তিক কথাবার্তার বিষয়। সাংবাদিক বৈঠক করেও এ সব অভিযোগ তোলেন তিনি। টুইটে সব অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিছু ক্ষেত্রে সরকার পাল্টা জবাবও দেয়।
আরও পড়ুন: দ্বন্দ্ব ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে কাজের বার্তা অভিষেকের
বুধবারই পূর্ব মেদিনীপুরের বর্গভীমা মন্দির পরিদর্শনের পরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও আমপানের সময় রাজ্যের প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল। ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে।’’ রাজ্য ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ চালু না করে বঙ্গের কৃষকদের বঞ্চিত করছে বলেও ফের অভিযোগ করেন তিনি।
রাজ্যপালকে ছেড়ে কথা বলে না তৃণমূলও। নিয়মিত রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করে রীতিমতো কটাক্ষ করা হয় তাঁকে। নিশানা করা হয় ধনখড়ের ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’কে। ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই তাপ বাড়ছে।
এমন আবহে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়ে রাজনৈতিক মহল কৌতূহলী। সূত্রের খবর, প্রথম দিকে অল্প সময় রাজ্যপালের স্ত্রী উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ আলোচনাই হয় সরাসরি ধনখড় ও মমতার মধ্যে। তৃতীয় কেউ ছিলেন না। ফলে ঠিক কী কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা কঠিন।
আরও পড়ুন: ফের প্রবীণেই আস্থা মমতার, দায়িত্ব বণ্টন জেলায় জেলায়
তবে অনেকের মতে, রাজভবনের ব্যয়বরাদ্দ ‘কমানো’ থেকে শুরু করে সেখানে অফিসারদের সংখ্যা ‘হ্রাস’ নিয়ে রাজ্যপালের কিছু ক্ষোভ আছে। রাজভবনের এক সূত্রের দাবি, রাজ্যপালকে তাঁর দফতরের ‘খরচ’ চালাতে ধার নিতে হচ্ছে। যদিও নবান্নের বক্তব্য, অল্প দিন আগেই রাজভবনকে কয়েক লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, রাজভবনে এখন মাত্র এক জন আইএএস এবং এক জন ডব্লিউবিসিএস অফিসার আছেন। ওই আইএএস অফিসারের অবসর আসন্ন। বৈঠকে এ সব প্রসঙ্গ ওঠাও স্বাভাবিক।
নবান্নের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় দুই সাংবিধানিক পদাধিকারীর মধ্যে একান্ত বৈঠকে প্রাসঙ্গিক ভাবে বহু কথাই আলোচিত হতে পারে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট। বৈঠকের পরে তাঁরা দু’জনেই খুশি। সব ভাল যার শেষ ভাল।’’