অনেক প্রকল্পই তো হাতে নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা কতটা পৌঁছচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে? আদৌ পৌঁছচ্ছে তো?
এই সব প্রশ্ন আছে প্রবল ভাবে। তাই চালু প্রকল্পগুলির অগ্রগতির উপরে সরাসরি নজরদারি চালু করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরই এই নজরদারি চালাবে বলে নবান্নের প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
বিভিন্ন দফতরকে তাদের প্রকল্পের সবিস্তার তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। কোন প্রকল্প কবে থেকে কী ভাবে চলছে, তাতে কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং যুক্ত আছেন, একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছেছে কি না, প্রকল্পটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের কোনও পরামর্শ বা অভিযোগ আছে কি না— এই সব তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নথিভুক্ত করে পাঠাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। এমনকি, যে-সব উপভোক্তা প্রকল্পের আওতায় আছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা-সহ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকার সবিস্তার তথ্যও জানাতে হবে ওই রিপোর্টে।
প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অনেক দিন আগে থেকেই এই ধরনের ‘ডেটা বেস’ বা তথ্য ভাণ্ডার তৈরির পরিকল্পনা ছিল। এমন তথ্য ভাণ্ডার থাকলে প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক লহমায় পাওয়া যাবে। প্রকল্পে কোনও সংশোধন, পরিমার্জন দরকার হলে তা-ও সঙ্গে সঙ্গেই করা সম্ভব।’’ প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তৃণমূল সরকারের প্রথম পাঁচ বছরেই প্রকল্প-ভিত্তিক এমন একটি ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। কোন পদ্ধতিতে কী ভাবে তা ব্যবহার করা হবে, তার রূপরেখাও রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল ওই দফতর। কিন্তু কোনও কারণে তখন তা গ্রহণ করেনি রাজ্য।
গত প্রায় আট বছরে নানান প্রকল্প চালু করেছে সরকার। যেগুলির সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলির পরিধি বাড়িয়ে বহু সংখ্যক মানুষকে প্রকল্পগুলির আওতায় আনা হয়েছে। তার পরেও লোকসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূলের আসন-সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেক কমে যাওয়া এবং প্রচুর আসনে বিজেপির জয়ের বিষয়টি প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা বাড়িয়েছিল। নির্বাচনী ফলের ময়না-তদন্তের পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানানোর জন্য পৃথক শাখা তৈরি হয়েছে। সেখানে মানুষ নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানিয়ে সরকারের কাছে প্রতিকার চাইতে পারেন। সেই শাখাকে সক্রিয় রাখতে অভিজ্ঞ এক আইএএস অফিসারকে তার পরিচালনা ভার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই সূত্রে প্রকল্পগুলির নজরদারি নিয়ে সরকারি পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, জনমোহিনী প্রকল্পগুলির বাস্তব চিত্র জানতে চাইছে সরকার। যেমন, যাঁদের জন্য প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাঁরাই তা পাচ্ছেন কি না, তৃণমূল স্তরে যথার্থ রূপে তা পৌঁছচ্ছে কি না, প্রকল্পের কোনও পরিমার্জন বা সংশোধন দরকার আছে কি না ইত্যাদি। এক কর্তার কথায়, ‘‘তৃণমূল স্তর থেকে আসা তথ্য যথাযথ কি না, সেটাও এ বার খতিয়ে দেখতে চাইছে সরকার। যাতে সরকারি প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে না-পারে।’’