প্রতীকী চিত্র।
কোথাও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কোথাও যে ক’জন রয়েছেন, তাঁদের অনেকে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন বা বদলির আবেদন করেছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি মাদ্রাসা খোলার পরে এমনই ছবি উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের গ্রামীণ এলাকায়।
ইসলামপুর থানার পমাইপুর হাই মাদ্রাসায় প্রায় ২ হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ৩০ জন। তার থেকে ১১ জন শিক্ষক বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। আরও আট জন শিক্ষক আবেদন করেছেন বদলির জন্য। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবু তাহের মিয়া বলছেন, ‘‘ওই আট জনও চলে গেলে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।’’ ডোমকলের শাহাদিয়ার হাই মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের চার জন শিক্ষক ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছেন বদলি নিয়ে। ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সামাউন আনসারি বলছেন, ‘‘বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস কেমন করে নেওয়া হবে, তা ভেবেই কুল করতে পারছি না।’’ ডোমকলের ভাতসালা হাই মাদ্রাসার অবস্থাও প্রায় একই রকম। সেখান থেকে ৫ জন শিক্ষক চলে গিয়েছেন।
প্রত্যন্ত এলাকাতেই এই সমস্যা সব থেকে বেশি। এলাকার অনেক শিক্ষক গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরমুখী হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যন্ত গ্রামের পুরনো স্কুলের বদলে শহরের বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি নিয়ে নিচ্ছেন বলে মাদ্রাসার শিক্ষকদেরই একাংশের দাবি। শিক্ষকদের বড় একটা অংশের দাবি, এর ফলে গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা বড় ধাক্কা খাবে। যেমন, সাগরপাড়া থানার সিতানগর হাইস্কুলের ৫ জন শিক্ষক ইতিমধ্যেই বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। সেই জায়গায় মাত্র এক জন এসেছেন। প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলি বলছেন, ‘‘নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না হলে স্কুল চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’’ রানিনগরের রামনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। সীমান্তের ওই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা নির্ভর করে ওই মাদ্রাসার উপরেই। তা ছাড়া, বরাবর মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করায় সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির আগ্রহও রয়েছে। ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শামসুল হক বলছেন, ‘‘এমনিতেই ১১ জন শিক্ষকের ঘাটতি ছিল। ইতিমধ্যে ১৬ জন বদলির আবেদন করেছেন, বেশ কয়েক জন চলেও গিয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ফলে পুরোপুরি ভাবে স্কুল শুরু হলে স্কুলের গেটে তালা লাগানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না আমাদের।’’
শামসুল হকের দাবি, ‘‘মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাছে বারবার লিখিত আবেদন জানিয়েছি, বদলি নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হোক, যাতে স্কুল বিপাকে না পড়ে।’’ রাজ্য মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম আলি আনসারি বলেন, ‘‘বদলি নিয়ে নিয়মকানুন না থাকার অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়, তবে কোনও মাদ্রাসায় যদি এমন সমস্যা হয়ে থাকে আমাদের জানালে তাদের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টি আমরা দেখব।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মুর্শিদাবাদের সভাপতি আলমগির মনির উদ্দিন খান বলছেন, ‘‘কেবল সিনিয়রিটি ছাড়া মাদ্রাসা কমিশনে বদলির ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। এর ফলে এক দিকে যেমন জেলার মাদ্রাসাগুলি সঙ্কটে, তেমন ভাবে অনেক শিক্ষকও সমস্যায় পড়েছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’’