পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইনে কয়েকটি সংশোধনী আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই সংশোধনীর একটি খসড়া বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে পেশ করেন রাজ্যের এজি (অ্যাডভোকেট জেনারেল) জয়ন্ত মিত্র। এজি আদালতে জানান, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ওই খসড়া সংশোধনী মেনে নিলে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন পাশ করা হবে।
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, ২০০৮ সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইন তৈরি হয়। সেই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে কাঁথির একটি মাদ্রাসা। হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী গত বছরের ১২ মার্চ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইন বাতিল করে দেন। বিচারপতি চক্রবর্তী তাঁর রায়ে জানান, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত অগ্রাধিকার পাবে।
বিচারপতি চক্রবর্তীর রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আলাদা ভাবে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করে। কয়েক দিন শুনানির পরে রাজ্য সরকার অগস্টে আদালতে জানায়, তারা মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিতে চায়। প্রয়োজনে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আইন সংশোধনও করা হবে।
এক্রামুল জানান, রাজ্যের এজি এ দিন সংশোধনীর যে-খসড়া আদালতে পেশ করেন, তাতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসাগুলিতে যে-সব শিক্ষক নিযুক্ত হবেন, তাঁদের টেট (টিচার্স এবিলিটি টেস্ট) পাশ করতে হবে। টেট নেবে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। টেট পাশ করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা কী হবে, রাজ্যই তা ঠিক করবে। শিক্ষার মান বজায় রাখতেই এটা করা দরকার।
সংশোধনীর খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসাগুলিতে যে-সব পদ শূন্য হবে, মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ম মেনে সেই সব পদে নিয়োগ করবে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার পরিচালন কমিটি। এক্রামুল জানান, সংশোধনীর খসড়ায় বলা হয়েছে, সংশোধনী আইন পাশের আগে যে-সব প্রার্থী মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে প্যানেলভুক্ত হয়ে রয়েছেন, তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না।
সংশোধনীর এই খসড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, কোনও সার্ভিস কমিশনের কাজ কি শুধু চাকরির পরীক্ষা নেওয়া? তাঁদের বক্তব্য, মাদ্রাসায় নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট নিয়ে প্যানেল তৈরির পরের ধাপ কী হবে, সেই বিষয়ে সংশোধনীর খসড়ায় কিছু বলা হয়নি। সংশ্লিষ্ট পরিচালন কমিটি মাদ্রাসায় নিয়োগ করতে পারলেও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্যানেল থেকে কোন মাদ্রাসায় কাদের নাম কী ভাবে পাঠানো হবে, সেই ব্যাপারেও খসড়ায় স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি বলে ওই কর্তারা জানান।