প্রতীকী ছবি।
করোনা পর্বে স্কুল-সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন অনলাইন পঠনপাঠনের বন্দোবস্ত হলেও অনেক ছাত্রছাত্রী, বিশেষত দূরদূরান্তের গ্রামীণ পড়ুয়াদের অনেকের কাছে তার সুফল পৌঁছয়নি। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য জন্য রেডিয়োকে পড়াশোনার মাধ্যম করছে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ। ‘‘এ বার মাদ্রাসার পড়ুয়াদের রেডিয়োর মাধ্যমে শিক্ষা দান করা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই এই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে,’’ বলেন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন।
পর্ষদ-প্রধান জানান, কলকাতার বিবিধ ভারতী, আকাশবাণী শিলিগুড়ি এবং আকাশবাণী মুর্শিদাবাদ থেকে পঠনপাঠনের এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। এই কর্মসূচিতে আপাতত শিক্ষামূলক ক্লাস হবে হাইমাদ্রাসা আলিমের পড়ুয়াদের জন্য। তবে ধীরে ধীরে সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাই এই ক্লাস করার সুয়োগ পাবে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য রাজ্য সরকারের স্কুলগুলোর মতোই মাদ্রাসা পর্ষদের স্কুলগুলিও মার্চ থেকে বন্ধ। পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলার অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছয়নি অথবা পৌঁছলেও সেই সংযোগ অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে রেডিয়ো দিব্যি চলে সেই সব এলাকাতেও। বিবিধ ভারতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেডিয়ো স্টেশনের নানান অনুষ্ঠান নিয়মিত শোনেন সর্বস্তরের শ্রোতারা। অতিমারিতে সেই সুযোগটাকেই পড়াশোনার কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর্ষদ-প্রধান জানান, তাঁদের অনেক ছাত্রছাত্রীই গ্রামাঞ্চলে থাকে। তারা সাইবার-সরণিতে পড়াশোনার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে না। কারণ, সেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা তো আছেই। তা ছাড়াও অনেক গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন নেই। তাই তারা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ক্লাস করতে পারে না। “আমরা সমীক্ষায় দেখেছি, কোনও কোনও গ্রামে পড়ুয়ার বাড়িতে হয়তো স্মার্টফোন নেই, কিন্তু রেডিয়ো আছে। তাই আরও বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনোর জন্য আমরা রেডিয়োকেই হাতিয়ার করেছি,” বলেন আবু তাহের। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অন্য এক কর্তা জানান, এতে অন্তত তিন দিক থেকে ছাত্রছাত্রীদের সুরাহা হবে। প্রথমত, থমকে যাওয়া পড়াশোনা ফের চালু হবে দূরদূরান্তের গ্রামেও। দ্বিতীয়ত, স্মার্টফোনের মাসিক খরচ থাকলেও রেডিয়োয় তা নেই। তাই এই পঠনপাঠনের সুযোগ নেওয়ার জন্য বাড়তি কোনও খরচের প্রশ্ন নেই গরিব পড়ুয়াদের। তৃতীয়ত, লোডশেডিং হয়ে গেলেও রেডিয়োর পাঠ-কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।
আবু তাহের জানান, এখন বিভিন্ন মাদ্রাসায় অমুসলিম পড়ুয়ার সংখ্যা কম নয়। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক অমুসলিম ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। চলতি বছরের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেই সব পড়ুয়াও মেধা-তালিকায় রয়েছে। রেডিয়োয় পাঠদান শুরু হলে সব ধরনের পড়ুয়াই উপকৃত হবে। পড়াবেন বিশিষ্ট শিক্ষকেরাই।