প্রতি বছরই মাধ্যমিকে নজর কাড়ে জেলার সাফল্য। এবারও তার অন্যথা হয়নি। তার মধ্যেই যেমন মালদহ রয়েছে, তেমনই রয়েছে পূর্ব বর্ধমান। —প্রতীকী চিত্র।
২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার জয়জয়কার। গত বছর মাধ্যমিকে কলকাতার স্কুলগুলি থেকে মাত্র এক জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু এ বার মেধাতালিকায় কলকাতা একেবারে শূন্য। এ বার মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে দেবদত্তা মাঝি। বর্ধমানের কাটোয়া দুর্গাদাস চৌধুরী গার্লস স্কুলের ছাত্রী সে। মোট ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯৭ পেয়ে প্রথম হয়েছে সে। শতাংশের বিচারে ৯৯.৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে ২ জন পরীক্ষার্থী। তারাও বর্ধমান জেলার। এক জনের নাম শুভম পাল এবং অন্য জন মালদহের রিফাত হাসান সরকার। তাদের দু’জনের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯১। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মোট ৬ জন। যুগ্ম চতুর্থ হয়েছেন সমাদৃতা সেন এবং অনীশ বাড়ুই। পঞ্চম স্থানে রয়েছেন শুভজিৎ দে এবং অরিজিৎ মণ্ডল।
মাধ্যমিকে জেলার জয়জয়কার:
শুক্রবার সকালে পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন। এ বছর মাধ্যমিকে বর্ধমান জেলার ফলাফল অন্য জেলার চেয়ে ভাল। শুভম ছাড়াও বর্ধমান মিউনিসিপাল হাই স্কুলের আরও ৬ পড়ুয়া মেধাতালিকার প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে ৬৮৯ নম্বর পয়ে চতুর্থ হয়েছে অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬৮৮ পেয়ে পঞ্চম হয়েছে শেখ সায়িদ ওয়াশিফ। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে প্রনীল যশ। ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে ওই স্কুলের তিন ছাত্র— ঈশানচন্দ্র বর্মণ,দেবরাজ হাজরা এবং অর্কদীপ গোস্বামী।
এ ছাড়াও বর্ধমানে সিএমএস হাই স্কুলের ছাত্র রূপায়ণ পাল ৬৮৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করেছে। ৬৮৫ নম্বর পেয়ে অষ্টম স্থান পেয়েছে সেখ আফিফ জাহিন। পূর্ব বর্ধমানের অমড়াগড় হাই স্কুলের ছাত্রী ঈশিতা ভট্টাচার্য্য ৬৮৪ নম্বর পেয়ে নবম এবং অঙ্কুর ঘোষ ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম স্থান অধিকার করেছে। ৬৮৪ নম্বর পেয়েছে বর্ধমানেরই সুলতানপুর তুলসীদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী শবনম পারভিন। জেলার এত জন পড়ুয়ার প্রথম দশে জায়গা করে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বর্ধমানের বাসিন্দা স্বপন সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জেলাভিত্তিক পাশে হারে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর:
তবে জেলাভিত্তিক পাশের হারের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর (৯৭.৬৩ শতাংশ)। দ্বিতীয় স্থানে কালিম্পং (৯৪.৭১ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে আছে কলকাতা। সার্বিক পাশের হারে তৃতীয় হলেও প্রথম দশের মেধা তালিকায় থাকা ১৬ জেলার ১১৮ জনের মধ্যে নেই কলকাতার কোনও পড়ুয়া। অন্য দিকে, মেধাতালিকায় প্রথম দশজনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা রয়েছে। প্রথম দশের মধ্যে স্থান পাওয়া পড়ুয়াদের নিরিখে সবাইকে যেন ছাপিয়ে গিয়েছে মালদহ। ওই জেলার সব স্কুল মিলিয়ে মোট ২১ জন প্রথম দশের মধ্যে স্থান পেয়েছে। আবার মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা হলেও নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এক ছাত্র প্রথম দশে রয়েছে।
এ বার মাধ্যমিকে মোট পাশের হার ৮৬.১৬ শতাংশ:
চলতি বছর মাধ্যমিক দিয়েছিল ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ১০৫ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯০৯ জন। পাশের হার ৮৬.১৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০ জনের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। ২ জনের রেজাল্ট আটকে গিয়েছে প্রযুক্তিগত কারণে। তফসিলি উপজাতি পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৭৬ শতাংশ। এ বছর মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়েছে ১ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী।
বস্তুত, মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭৬ দিনের মাথায় শুক্রবার সকালে ফলাফল প্রকাশ করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া কোনও পড়ুয়া যদি নম্বর যাচাই করতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাকে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। অকৃতকার্য পড়ুয়ারা একই প্রক্রিয়ায় খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারবে। কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে এই আবেদন করতে হবে, তা জানিয়ে দিয়েছে পর্ষদ। আগামী ৩ জুন পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটটি সক্রিয় থাকবে। তার মধ্যেই আবেদন জানাতে হবে পড়ুয়াদের। খাতা পুনর্মূল্যায়ন করাতে চাইলে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ৫০ টাকা দিতে হবে। কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের নম্বর যাচাইয়ের জন্য ৪০ টাকা দিতে হবে। মাধ্যমিকের মার্কশিটের প্রতিলিপি এবং নাম, রোল নম্বর জানিয়ে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হবে পড়ুয়াদের। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ আবেদন জানালে তা গ্রাহ্য হবে না বলে জানিয়েছে পর্ষদ।
শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল ছাত্রছাত্রীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণ হোক তোমাদের আগামীর প্রতিটি দিন।’’
আগামী বছর আরও এগিয়ে মাধ্যমিক:
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা এগিয়ে আসছে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের।