সোশ্যাল সাইটে ছড়াল ইতিহাসের প্রশ্নপত্র। নিজস্ব চিত্র।
বাংলা, ইংরেজির পরে এ বার ইতিহাস। মাধ্যমিক পরীক্ষার তৃতীয় দিনেও পরীক্ষা চলাকলীন প্রশ্ন বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। আগে কখনও মাধ্যমিকে পরপর তিন দিন প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছিল কি না, শিক্ষা শিবির মনে করতে পারছে না।
অভিযোগ, আগের দু’টি পরীক্ষার মতো শুক্রবারেও ইতিহাসের পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে বেরিয়ে যায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বারবার নির্দেশ দিচ্ছে, কোনও ভাবেই পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া যাবে না। কোনও পরীক্ষার্থী ফোন ব্যাবহার করলে তার পরীক্ষা বাতিল হবে। শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর কাছে ফোন পাওয়া গেলে তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে। তা সত্ত্বেও তিনটি পরীক্ষায় দেখা গেল, পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন বাইরে এসেছে হোয়াটসঅ্যাপে।
পর্ষদের হুঁশিয়ারিতে কাজ না-হওয়ায় পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে আসরে নামেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনিও মোবাইল রাখলে পরীক্ষা বাতিল ও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সাসপেন্ড করার কথা বলেন। ইংরেজি পরীক্ষা চলাকালীন এক শিক্ষক ফোন ব্যবহার করায় উত্তর দমদমের এক শিক্ষককে সাসপেন্ডও করে পর্ষদ। মন্ত্রী জানিয়ে দেন, ইতিহাস পরীক্ষা থেকে মোবাইলের বিষয়ে আরও কড়া নজরদারি চালানো হবে।
কিন্তু নদিয়ার মোবারকপুর কলোনি হাইস্কুলে এ দিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে মোবাইল-সহ ধরা পড়ে এক পরীক্ষার্থী। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ওই পরীক্ষার্থীকে ‘আরএ’ (‘রিপোর্টেড এগেনস্ট’) করা হয়েছে। সে তেহট্ট বেতাই হাইস্কুলের ছাত্র। পুরো বিষয়টি উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বারবার প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় সমালোচনায় মুখর হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদত সৌগত বসু বলেন, ‘‘চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এত বড় পরীক্ষা নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার দক্ষতা পর্ষদের নেই।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, এর দায় শুধু পর্ষদের নয়, পুলিশ-প্রশাসনেরও। তারা কেন ঠিকমতো নজরদারি চালাচ্ছে না। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষকদের মোবাইল নিয়ে যেতে বারণ করায় তাঁদের প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাসের আবহ তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যেও প্রতিদিন প্রশ্নপত্র বাইরে যাচ্ছে। আমরা পর্ষদ-সভাপতির পদত্যাগের দাবি করছি।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, ‘‘ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ইতিহাস সৃষ্টি করল মাধ্যমিকের পর্ষদের কর্তৃপক্ষ। শিক্ষামন্ত্রী কি বলবেন, চলছে চলবে!’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি ভাল ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, এ দিন পরীক্ষা চলাকালীন কোথাও কোনও প্রশ্ন বাইরে বেরোয়নি।
মাধ্যমিক নিয়ে এই চাপান-উতোরের মধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ মোবাইল আনছে কি না, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তা পরীক্ষা করা হবে। শিক্ষকেরা পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল আনলে ভেনু সুপারভাইজার নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংসদে অভিযোগ জানাবেন।