চলাকালীন নানা ধরনের প্রলোভন আসছে। যার মধ্য দিয়ে সাইবার ক্রাইম হয়ে যেতে পারে। তাই সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে ভাল ধারণা মাধ্যমিক স্তরেই তৈরি হওয়া দরকার।
প্রতীকী ছবি।
সাইবার সরণিতে চলাফেরার সুফল অনেক। কিন্তু সেই পথে বিপদও পদে পদে। বিশেষত অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা কৌতূহলবশে সাইবার পরিসরের অযুত সম্ভাবনার সুযোগ নিতে গিয়ে প্রায়শই পড়ে যায় নানা ধরনের বিপদ ও অপরাধের ফাঁদে। সেই ফাঁদ থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভাবে স্কুলপড়ুয়াদের সাইবার-প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই সাইবার-শিক্ষা নিতে পারবে।
এই প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সাইবার সিকিয়োরিটি সেন্টার অব এক্সেলেন্স পরিচালিত এই কোর্সের নাম দেওয়া হয়েছে সাইবারের সহজপাঠ। সরকার জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে এই পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ১০ ঘণ্টা। দৈনিক আড়াই ঘণ্টা করে প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যাবে চার দিনে। ইতিমধ্যেই দু’হাজার পড়ুয়া এতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমেই প্রশিক্ষণ চলবে।
প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে কাল, মঙ্গলবার। তার আগে, রবিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই পাঠ্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত মাধ্যমিকের টেস্ট পেপারের মধ্যে এই কোর্সের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তাতে বহু পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। বিজ্ঞাপন দেখেই নাম লিখিয়েছে পড়ুয়ারা।
কয়েক দশক আগে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে পড়ুয়ারা পাড়ায় পাড়ায় টাইপিং কিংবা শর্ট হ্যান্ড শেখার স্কুলে ভর্তি হত। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে ওই প্রশিক্ষণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী কালে সেই জায়গা নেয় কম্পিউটার। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে কম্পিউটার রয়েছে স্কুলপাঠ্যেই। কম্পিউটার, স্মার্টফোনের যুগে মাধ্যমিক পাশ করার আগেই প্রযুক্তি ব্যবহারে দড় হয়ে উঠছে পড়ুয়ারা। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নানা অপরাধের কৌশলও। সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের একাংশের মতে, প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলেও অল্পবয়সিরা সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে না। ফলে নানা অপরাধের ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সেই জন্যই এই পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে, স্কুলবেলা থেকেই এই সাইবার প্রশিক্ষণ খুব কাজে লাগবে। বেহালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বেরা বলেন, ‘‘আমরা যখন ক্যাশলেস ইকনমির দিকে যাচ্ছি, তখন সাইবার প্রশিক্ষণ আরও ভাল করে হওয়া দরকার। আজকের দিনে একটা চায়ের দোকানে চা খেতে গেলেও কিউআর কোড ব্যবহার করে চায়ের দাম মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। টাকাপয়সা ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এখন রমরমা জাল নোট কারবারিদের নয়, হ্যাকারদের। এই হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাইবার প্রশিক্ষণ অবশ্যই দরকার। এবং সেটা মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে দেওয়াটা খুবই ভাল উদ্যোগ।’’
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘কোনও লিঙ্কে ক্লিক করতে গিয়ে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কী ধরনের ওয়েবসাইট সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে— এই সব পাঠ যদি মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু হয়, তা হলে ভবিষ্যতে সাইবার ক্রাইম থেকে অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবে পড়ুয়ারা।’’ কিছু প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীরা এখন অনলাইন পাঠ্যক্রম-নির্ভর। যা চলাকালীন নানা ধরনের প্রলোভন আসছে। যার মধ্য দিয়ে সাইবার ক্রাইম হয়ে যেতে পারে। তাই সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে ভাল ধারণা মাধ্যমিক স্তরেই তৈরি হওয়া দরকার।