প্রথম পরীক্ষা: মাধ্যমিক দিয়ে বেরোচ্ছে তিন দৃষ্টিহীন ছাত্র। মঙ্গলবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাবে বড় মেয়ে। যাতায়াতের টাকা চাইল বাবার কাছে। তাতেই যেন চোখ খুলে গেল বাবা আমিনুর মিয়াঁর। তিল তিল করে জমানো টাকার অধিকাংশই তিনি দিয়ে দিলেন গরিব ছেলেমেয়েদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত এবং খাওয়া খরচ বাবদ। আমিনুর বলছেন, ‘‘আমার মা টাকার অভাবে আমাকে পড়াতে পারেননি। আমি তো কয়েকটা গরিব ছেলেমেয়েকে একটু হলেও এগিয়ে দিলাম!’’ মেয়ে নেহানুর পরভিন বলছে, ‘‘বাবা বরাবরই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করেন। কিন্তু আজ যা করলেন, তা ভাবতেও পারিনি। আমার এত আনন্দ হচ্ছে!’’
নিজে প্রথম শ্রেণির গণ্ডিও পার হতে পারেননি আমিনুর। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, যখন মাত্র ছ’দিন বয়স, বাবা ছেড়ে চলে যান। মা তাঁকে নিয়ে আসেন নানা-নানির কাছে। স্কুলে ভর্তি হলেও গরিবের সংসারে খরচ টানা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ওই ক্লাসেই পড়া শেষ। আমিনুর জানান, তার পরে জীবনযুদ্ধ। মাথাভাঙায় থাকতেন। বড় হওয়ার পরে কাজের খোঁজে সেখান থেকে বিহার। তার পরে আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁয়। সেখানে কিছুদিন শ্রমিকের কাজ করার পরে এখন তিনি লটারির টিকিট বেচেন।
আমিনুর বলছিলেন, ‘‘এই সব কাজ করে মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই করেছি। বউ, দুই মেয়েকে নিয়ে থাকি। অতটুকু জায়গায় অসুবিধা। ইচ্ছে ছিল বাড়িটা একটু বাড়াব। কিন্তু মেয়ের কথা শুনে মনটা ঘুরে গেল।’’ আমিনুরের বড় মেয়ে নেহানুর এ বারে মাধ্যমিক দিচ্ছে। সে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত আর টিফিন খরচ চেয়েছিল। আমিনুর যেন সঙ্গে সঙ্গে শৈশবে ফিরে যান। ‘‘আমিও তো টাকার অভাবে পড়তে পারিনি। অনেকেই আছে, যারা হয়তো একই কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে না, বা পরীক্ষা দিলেও থাকবে না খেয়ে। তাই ঠিক করলাম, সঞ্চয়ের সামান্য টাকা দিয়ে দেব,’’ বললেন তিনি। অনেক কষ্টে দেড় লাখ টাকা জমিয়েছিলেন বছর চুয়াল্লিশের আমিনুর। স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই ক্লাবই আমিনুরের ইচ্ছেপূরণের ব্যবস্থা করে।