স্বাভাবিক ছন্দে দার্জিলিং। ম্যালে পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকেরাও।
মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলা নিয়ে দলের তরফে আইনি পদক্ষেপ বহাল রয়েছে। তা বলে পাহাড়ের বিরোধীদের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করতে ছাড়ছে না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ-সহ দলের ন’জন সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। আবার এ দিনই দার্জিলিং পাহাড়ের প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধীদের প্রতি মোর্চার শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, ‘‘আদালতে প্রমাণ হবে কে দোষী, কে নির্দোষ। বিরোধীরা যে ভাবে চেঁচামেচি করছেন, সেটা ঠিক হচ্ছে না।’’ মোর্চার কোষাধ্যক্ষ দাওয়া লামার এই মন্তব্যের মধ্যে ‘প্রছন্ন হুমকি’ এবং ‘হুঁশিয়ারি’ দেখছেন বিরোধীরা।
কলকাতায় মোর্চার তরফের আইনজীবী সায়ন দে জানান, এ দিন বিকেলে গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী আশা গুরুঙ্গ, মোর্চা নেতা রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী, রমেশ অ্যালে-সহ ন’জন আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। পরে মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের দ্বিতীয় দফার অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম থাকা আরও ১৪ জন (মোট অভিযুক্ত ২৩) ধাপে ধাপে একই আবেদন করবেন।
পাহাড়ে অবশ্য এ দিনই গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ নেতা দাওয়া লামা বলেছেন, ‘‘দলের নেতারা সবাই নির্দোষ। তা আদালতে প্রমাণ হবে। সে জন্য আইনি লড়াই জারি রয়েছে। তা বলে পাহাড়ের বিরোধী দলগুলি যে ভাবে চেঁচামেচি করছে, তা ঠিক হচ্ছে না। আমরা আশা করব, অপপ্রচার থেকে সবাই বিরত থাকবেন।’’
এর পরে তিনি দাবি করেন, পাহাড়ে হুটহাট দোকানপাট বন্ধ করানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। পাহাড়ের পরিবেশ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য দলের সকলকে সাহায্য করার অনুরোধও করেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, পাহাড় ছিল এ দিন পুরোপুরি স্বাভাবিক। পর্যটকেরা উপভোগ করেছেন টয় ট্রেনের ‘জয়রাইড’। কেভেন্টার্স, গ্লেনারিজে ছিল উপচে পড়া ভিড়। টাইগার হিলেও ছিল গাড়ির লাইন।
স্বাভাবিক দার্জিলিং। পর্যটকেরা আসছেন শৈলশহরে। গাড়ির ভিড়ে জমজমাট শহরের চকবাজার এলাকা।
তবে দাওয়া লামার মন্তব্য জেনেই মোর্চার বিরুদ্ধে চাপা হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ, সিপিআরএম-সহ মোর্চা বিরোধীরা। সদ্যগঠিত মোর্চা-বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের তরফে গোর্খা লিগ নেতা প্রতাপ খাতি বলেন, ‘‘মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার চার্জশিটে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরেও কেন ধরা হচ্ছে না, সেটাই বুঝতে পারছি না। যে ভাবে আমাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তাতে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছি। কলকাতায় আইনি লড়াই আর পাহাড়ে বেআইনি ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার ছক কিন্তু পাহাড়বাসী মানবেন না।’’
২০১০-এর ২১ মে দার্জিলিঙের ক্লাবসাইড রোডে জনসভা চলাকালীন সভাস্থলেই ‘অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ’-এর সভাপতি মদন তামাঙ্গকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই মামলায় গত ২৯ মে দ্বিতীয় অতিরিক্ত
চার্জশিট ও সামগ্রিক রিপোর্ট আদালতে পেশ করে সিবিআই। ৬ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয় কলকাতা নগর দায়রা আদালত। ওই পরোয়ানা কার্যকর করা হয়েছে কি না, তা আগামী ২৬ জুনের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। সিবিআই সূত্র জানিয়েছে, ২৬ তারিখের মধ্যে সবাইকে গ্রেফতার না করা গেলে পরোয়ানা কার্যকর করার সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানানো হতে পারে।
সোমবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।